Advertisement
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সীমান্তে গমে লাগাম টানছে কৃষি দফতর

বৃহস্পতিবার কলকাতায় গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে এ বিষয়ে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অন্য জেলার কৃষি আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

ঝলসা স্মৃতি এখনও দগদগে। ছত্রাক ঘটিত এই রোগে টানা দু’বছরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে গম চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু গত মরসুমেই সীমান্ত ঘেঁষা ওই দুই জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির গম কেটে পুড়িয়ে দিতে হয়েছে। আর সেটা মাথায় রেখে এ বারে ওই দুই জেলায় গমের বিকল্প হিসেবে ডালশস্য ও তৈলবীজ চাষের পরামর্শ দেবে কৃষি দফতর।

বৃহস্পতিবার কলকাতায় গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে এ বিষয়ে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অন্য জেলার কৃষি আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সঞ্জীব চোপড়া, কেন্দ্র সরকারের কৃষি দফতরের যুগ্ম সচিব-সহ অন্যান্য আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই নদিয়া-মুর্শিদাবাদে আগামী দু’বছর গম না বোনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাকি জেলাগুলিকে সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটারের ভিতরে গম চাষ না করার কথাও বলা হয়েছে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে ঝলসার আক্রমণে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর গম চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সীমান্ত ডিঙিয়ে সেই রোগ থাবা বসিয়েছিল এ পার বাংলাতেও। গমচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে গত মরসুমে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে গমের বিকল্প চাষের নিদান দিয়েছিল কৃষি দফতর। জেলা জুড়ে প্রচারে কিছুটা সাড়াও মিলেছিল। কিন্তু সেই প্রচারে কান না দিয়ে যাঁরা গম বুনেছিলেন, তাঁরা সমস্যার পড়েন। কারণ, গম বড় হতেই ফের ঝলসার আক্রমণ শুরু হয়।

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ঝলসার থাবায় নদিয়ার করিমপুর ১ ও ২ ব্লক, তেহট্ট ১ ও ২ ব্লক, চাপড়া ব্লকে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুর্শিদাবাদের ডোমকল, জলঙ্গি, রানিনগর ১, হরিহরপাড়া, ও নওদা ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৫০৯ হেক্টর জমির গম। ওই গম কেটে পুড়িয়ে চাষিদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের আধিকারিক ও কৃষি বিজ্ঞানীরা। তার পরেই আগামী দু’বছর নদিয়া-মুর্শিদাবাদে গম চাষ থেকে চাষিদের বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নদিয়া জেলায় প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর ও মুর্শিদাবাদে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। ওই জমিতে গমের পরিবর্তে মুসুর, খেসারি, ছোলা, মটর, সর্ষে, ও সূর্যমুখী চাষের পরামর্শ দেওয়া হবে। কৃষি দফতর থেকে নিখরচায় ডালশস্য ও তৈলবীজ দেওয়া হবে। চাষিদের প্রশ্ন, এত ডাল কিংবা তেল কিনবে কে?

নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী বলছেন, “তৈলবীজ ও ডাল শস্যের চাহিদা থাকায় দামও ভাল। কেন্দ্র সরকারের আধিকারিকরা আমাদের জানিয়েছেন, ওই দুই জেলার কৃষকদের কাছ থেকে তাঁদের ডালশস্য এবং তৈলবীজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরা শীঘ্র নির্দেশও পাঠাবেন।”

এই দুই জেলার লোকজন তা হলে গম পাবেন কোথায়? মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুণ্ডু বলছেন, “চাষিদের রেশনে গম বা আটা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের আধিকারিকেরা।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ছত্রাক ঘটিত এই রোগ আক্রমণের ফলে গমের শীষ সাদা হয়ে দানা নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগের প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে, ১৫ দিনের মধ্যে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা রোগ প্রতিরোধের সুযোগ পান না বললেই চলে। কাছারিপাড়া সীমান্তের গমচাষি শঙ্কর মণ্ডল, জলঙ্গির নবাব মণ্ডলেরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘খুব শিক্ষা হয়েছে মশাই। এর আগে কৃষি দফতরের নিষেধ না শুনে গম চাষ করে বিস্তর টাকা লোকসান হয়েছে। এ বারে আর যাই করি না কেন, গম চাষ নয়।’’

সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নদিয়া-মুর্শিদাবাদে গম বোনা হয়। হাতে মাস দেড়েক সময়। তাই এখন থেকে চাষিদের সচেতন করতে উদ্যোগী হচ্ছে কৃষি দফতর। ইতিমধ্যে নদিয়া কৃষি দফতর বীজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের গমের বীজ না রাখার অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশ থেকেও যাতে কোনও ভাবে গমের বীজ সীমান্ত দিয়ে না ঢোকে সে বিষয়ে দুই জেলার কৃষি দফতর বিএসএফের সঙ্গেও কথা বলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Agriculture Department Wheat গম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy