Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Akhruzzaman

বাবার তাস খেলে আর কত দিন, প্রশ্ন তৃণমূলেই

নামে রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভা হলেও সমস্ত এলাকাটায় পড়ে জঙ্গিপুরের মধ্যে।

কৃষক বাজার। নিজস্ব চিত্র

কৃষক বাজার। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৭
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে বিধায়ক আখরুজ্জামানকে ভরসা জুগিয়েছিল জোট শরিক সিপিএম। আর এবারে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে তার বড় ভরসা বাবার রেখে যাওয়া কংগ্রেস ভোট। সেই ভোটের উপর ভরসা রেখেই তার রিপোর্ট কার্ডকে এগিয়ে রাখছেন কংগ্রেস থেকে বছর দুই আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া আখরুজ্জামান।

নামে রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভা হলেও সমস্ত এলাকাটায় পড়ে জঙ্গিপুরের মধ্যে। রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের ১০টি এবং লালগোলা ও সুতি ১ ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র। আখরুজ্জামানের বাবা প্রয়াত হাবিবুর রহমান এই এলাকার বিধায়ক ছিলেন ২৫ বছর। বাবার পরে ২০১১তে বিধায়ক হয়েছেন ছেলে। তৃণমূলের জোট শরিক হয়ে ৫০.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বামেদের হারান। ২০১৬তে জিতেছেন কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট প্রার্থী হয়ে ২৪ হাজার ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে। আর এ বার নিজেই দলবদলে একক ভাবেই দখল নিয়েছেন তৃণমূলের।

কংগ্রেসের দুর্গে আখরুজ্জামানের এই দলবদলে ক্ষোভ রয়েছে যেমন কংগ্রেসের মধ্যে, তেমনই ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরেও। পাশে নেই সিপিএমও।
তবু তার নেতার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ব্লক তৃণমূল সভাপতি সমিরুদ্দিন বিশ্বাস। আখরুজ্জামানের ছায়াসঙ্গী সমিরুদ্দিন। বিধায়কের সঙ্গেই ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সমিরুদ্দিন দল ছেড়ে এখন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি।
সমিরুদ্দিন বলছেন, “আখরুজ্জামানের বাবা দীর্ঘ দিন বিধায়ক ছিলেন জঙ্গিপুর এলাকার। ওই পরিবারের সঙ্গে এলাকার কংগ্রেস কর্মীদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তৃণমূলের বেশির ভাগ কর্মীও তার সঙ্গে। তাই তৃণমূলের একাংশের বিরোধিতা সত্বেও আখরুজ্জামানের জয় নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই। তবে জয়ের ব্যবধান কী হবে, এখনও তা বলার সময় আসেনি।”

বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে দু’দু’বার বিধায়ক হয়েছেন আবুল হাসনাত। দুবারই হারিয়েছেন হাবিবুর রহমানকে। এ বার যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। তিনি বলছেন, “এ বারের ভোট সমীকরণ অত সহজ নয়। কংগ্রেস ও বামের নিচুতলার বহু কর্মী তৃণমূলে গিয়েছেন এটাও যেমন ঠিক, আবার তৃণমূলের বহু নেতার বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে সেটাও ফেলার নয়। তাই কংগ্রেসের প্রার্থী যেই হোক তৃণমূলের জয় অত সহজ হবে না।”
ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আবুল কাশেম বিশ্বাস বলছেন, “হাবিবুর রহমানের রিপোর্ট কার্ড আর তার ছেলের রিপোর্ট কার্ডে আসমান জমিন ফারাক। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক হাবিবুর সাইকেল ভেঙে গ্রামে গ্রামে ছুটেছেন। আর তার ছেলে চার চাকা ছাড়া সাইকেল ছুঁয়েও দেখেননি কোনওদিন। কংগ্রেস সাংগঠনিক ভাবে জঙ্গিপুরে দুর্বল হয়েছে মানি, কিন্তু এখনও কংগ্রেসের প্রতীক দেখে ভোট দেন জঙ্গিপুরের গ্রাম গঞ্জের বহু মানুষ। পাশে আছে বামেরা। তাই খেলা হবে।”

তবে রঘুনাথগঞ্জ আসনে খেলা জমিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন তৃণমূলেরই এক বিক্ষুব্ধ নেতা। তিনি দলে আছেন, কিন্তু দলের কোনও কর্মসূচিতে সে ভাবে দেখা যায় না তাঁকে। ভোটের আসরে তিনি যে থাকছেনই তা প্রায় নিশ্চিত। তৃণমূল তাকে মনোনয়ন দিলে ভাল, না হলে কী হবে?
এই ‘না হলে’ থেকেই খেলা জমাতে কসুর করছেন না কংগ্রেসের নেতারা। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে তাই “দলের গদ্দার” বধে তৃণমূলেরই ওই বিক্ষুব্ধ নেতাকে প্রার্থী করার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস, আখরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। অরাজি নন ওই বিক্ষুব্ধ নেতাও।

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহরায় বলছেন, “কংগ্রেসের এই কৌশল রঘুনাথগঞ্জ কেন্দ্রে খেলা জমিয়ে দেবে তাই নয়, বাবার দুর্গে ছেলেকে বিড়ম্বনায় ফেলবে যথেষ্ট। লড়াই হবে কঠিন।”
কিন্তু এটা তো অস্বীকার করার নয়, সেই জনসংযোগে কোনও ঘাটতি নেই আখরুজ্জামানের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Congress Akhruzzaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE