Advertisement
E-Paper

নাড়ি তখনও চলছে ধুকপুক করছে, জেলা হাসপাতালে গেলে মেয়ে বাঁচবে তো?

দ্রুত ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়েছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। 

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৪০
সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।

সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।

মেয়েটা গলায় দড়ি দিয়েছে। নাড়ি তখনও চলছে ধুকপুক করে। করিমপুর হাসপাতাল দেরি করেনি। দ্রুত ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়েছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে।

ছুটছে অ্যাম্বুল্যান্স। উদ্বিগ্ন বাবা-মা মেয়েকে বাঁচাতে যা কিছু করতে হয়, তা করার জন্য মরিয়া। অ্যাম্বুল্যান্স চালক স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে বারবার পিছন ফিরে একান্ত আত্মীয়ের মতো বোঝাচ্ছেন, “জেলা হাসপাতালের অবস্থা খুব খারাপ। ডাক্তার থাকে না। দেরি হলে বাঁচানোই যাবে না।”

তা হলে কী করা উচিত? ঘাবড়ে গিয়ে জানতে চান মেয়েটির বাবা। এই সুযোগটাই চাইছিলেন চালক। গলায় এক রাশ উদ্বেগ জড়ো করে বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভাল হয় না? সন্তানই যদি চলে যায়, টাকা দিয়ে আর কী হবে!”

ওষুধে কাজ দেয়। খানিক ভেবে নিয়ে মেয়েটির বলেন, ‘‘শক্তিনগর নয়, চলুন জাতীয় সড়কের পাশের বেসরকারি হাসপাতালে।’’ অ্যাম্বুল্যান্স থেকে মেয়েটিকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগের দিকে। আর চালক চলে যান হাসপাতালের এক কর্মীর কাছে। নগদে মেলে ‘স্পট’— খয়েরি খামে কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট। রোগী ও চালকের নাম তারিখ দিয়ে লেখা হয় লম্বা খাতায়। পুরো হিসেব হবে পড়ে। রোগীর মোট বিল কী দাঁড়ায়, তার উপরে।

মেয়েটা বাঁচেনি। কিন্তু মোটা টাকা বিল মেটাতে হয়েছে। মেয়েটির এক আত্মীয় শক্তিনগর হাসপাতালেরই কর্মী। তাঁর কথায়, “ওরা আসবে বলে অপেক্ষা করছিলাম। ডাক্তারদের সঙ্গেও কথা বলে রেখেছিলাম। অথচ অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বুদ্ধিতে ওরা চলে গেল বেসরকারি হাসপাতালে!”

এটা আসলে রোজকার ছবি।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্লক বা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শ’য়ে-শ’য়ে রোগী আসেন জেলা হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল বা কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে। তাঁদের নিয়ে আসে যে সব অ্যাম্বুল্যান্স, তার মধ্যেই ওত পেতে থাকে দালাল, যারা মোটা কমিশনের জন্য রোগীদের নিয়ে যেতে চায় বেসরকারি হাসপাতালে।

একই অভিজ্ঞতা করিমপুর থেকে কালীগঞ্জ সর্বত্র। চালকদের একাংশের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী প্রথমেই ধরিয়ে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পরে মোট বিলের উপরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন মেলে। সেটা শুধু কৃষ্ণনগর নয়, রানাঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালও অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একই চুক্তিতে কাজ করায়। ছোট-বড় নার্সিংহোম-বেসরকারি হাসপাতালের দালালেরা সরকারি হাসপাতালেই ঘুরে বেড়ায়। তাদের কেউ হয়তো নিরাপত্তারক্ষী, কেউ বা সাফাইকর্মী। ডাক্তার ‘রেফার’ লেখার সঙ্গে-সঙ্গে ফোন চলে যায় বাইর দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকের কাছে।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের এক অ্যাম্বুল্যান্স কলকাতা বা অন্য কোথাও যান না। দিনভর হাসপাতাল চত্বরেই ঘুরে বেড়ান। তাঁর চোখে ঠিক ধরা পড়ে কোনও না কোনও খদ্দের। তাঁকে তিনি নিয়ে গিয়ে তোলেন ওই বেসকারি হাসপাতালে। তাঁর কথায়, “কলকাতায় পেশেন্ট নিয়ে গেলে সময় আর খরচ দু’টোই বেশি যায়। টাকা হয়তো একটু বেশি মেলে, কিন্তু লোকালে খেটেই বেশি লাভ।”

অনেক রোগীই এদের ফাঁদে পা দেন। যাঁরা দেন না, ‘রেফার কার্ড’ হাতে পাড়ি দিতে চান কলকাতা বা কল্যাণী, তাঁদেরও কি মুক্তি আছে? সেখানে অপেক্ষা করে থাকে আরও বড় ফাঁদ। বড় বড় দাদা। বড় বড় মাথারা। তাঁদের কাছে এই সব অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা চুনোপুঁটি।

Ambulance অ্যাম্বুল্যান্স Racket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy