Advertisement
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Jangipur

খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর থেকে সাফল্য মিজানুরের

এমনকি সাগরদিঘির উপনির্বাচনের প্রার্থীরাও হাজির তাঁর বাড়ি মিষ্টি ও ফুলের তোড়া নিয়ে।৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই সাগরদিঘি ব্লকের মধ্যে পিছিয়ে পড়া গ্রাম ফুলশহরি।

Mijanor stood 6th in WBCS exam

মিজানুর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৪
Share: Save:

খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে এ যেন এক চাঁদের আলো। সাগরদিঘির ফুলশহরি গ্রামের অভাবের সংসারে মিজানুর রহমানের আলোর ছটায় আজ আলোকিত যেন গোটা গ্রাম।বৃহস্পতিবার ফল বেরিয়েছে রাজ্য সিভিল সার্ভিসেসের। আর তাতেই ষষ্ঠ স্থান করে পেয়েছেন রাজ্য পুলিশ সার্ভিসেসের পদ। প্রাথমিক ভাবে ডেপুটি পুলিশ সুপার পদে প্রশিক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন বাড়িতে।

সেই থেকে ভিড় ভাঙছে তার বাড়িতে। এমনকি সাগরদিঘির উপনির্বাচনের প্রার্থীরাও হাজির তাঁর বাড়ি মিষ্টি ও ফুলের তোড়া নিয়ে।৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই সাগরদিঘি ব্লকের মধ্যে পিছিয়ে পড়া গ্রাম ফুলশহরি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বাস। শিক্ষার হার ৫৩ শতাংশ। সেখানেই জন্ম মিজানুরের। বাবা তোফজুল ইসলাম পেশায় হকার। কাজ করেন বাঁকুড়ায়। দুই ভাইয়ের বড় মিজানুর। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলেই পড়াশোনা। পাশেই শেখদিঘি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ। পরে অন্য একটি বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে জিয়াগঞ্জের শ্রীপত সিংহ কলেজে পড়া। স্নাতক হয়েই শুরু সিভিল সার্ভিসেসের প্রস্তুতি।

কিন্তু সিভিল সার্ভিসে কেন?মিজানুর বলছেন, “আমাদের ঘরের ছেলেদের শিক্ষকতা করার ঝোঁকটা বেশি। আমি চাইতাম চ্যালেঞ্জিং কিছু করতে। ক্ষমতা পেয়ে সমাজের মধ্যে কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন দেখতাম আমি। সিন্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাকে টানত। তাই একবারে না পারি দ্বিতীয় বার। আবার। সিভিল সার্ভিস আমার সেই স্বপ্নের উড়ান।” আর এই স্বপ্ন দেখিয়েছে তাঁরই গ্রামের ২০১৯ সালে সিভিল সার্ভিসে সি গ্রুপ পাওয়া এক বন্ধু গোলাম ইয়াজদানি।মিজানুর বলছেন, “কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের ছিল না। তাই কোনওরকমে বাড়িতেই অনলাইনে দেখে শুনে সারতে হয়েছে প্রস্তুতি। তবে প্রাথমিক পরীক্ষায়(প্রিলিমিনারি) উত্তীর্ণের পর আর সমস্যা হয়নি। সরকারি স্তরে ৫০ হাজার টাকার বৃত্তিটা খুব কাজে দিয়েছিল।”

মিজানুরের ইচ্ছে এ বার সর্বভারতীয় কোনও পরীক্ষায় বসে আইএএস বা আইপিএসে চেষ্টা করার। বলছেন, “কিন্তু তার জন্য যে রকম পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য দরকার সেটা কতটা পারব আমি জানি না। তাই চাকরিটাও দরকার। চাকরি করে সময় পেলে যদি পারি সে চেষ্টা করব।”দেওয়ালে ঘুঁটে দিচ্ছিলেন মা আসিয়া বিবি। মা বা বাবা দুজনেই নিরক্ষর। মা বলছেন, “ছেলে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। তার ফল পেয়েছে। অভাবের সংসারে ছেলের সব সাধ মেটাতে পারেনি। সবার মুখে আজ হাসি ফুটিয়েছে সে। তাই আনন্দে বুকটা যে ভরে উঠেছে।” অশ্রুমাখা আনন্দে যে জড়িয়ে এল কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE