E-Paper

ঋণ শোধে কাজে যান হাসিবুল

মঙ্গলবার ভোরে দেহ বাড়ি ফিরতেই, দুই পরিবারের বাড়িতেই ভিড় করেন প্রতিবেশীরা। এ দিনই তাঁদের দেহ কবর দেওয়া হয় বলে পরিবার সূত্রে খবর।

মনোদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ০৮:১৯
শোকস্তব্ধ জিয়াউল শেখের পরিবার।

শোকস্তব্ধ জিয়াউল শেখের পরিবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বাবার অসুখ সারাতে অস্ত্রোপচারে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। ঋণের বোঝা সংসারে। তার জন্যই ছেলে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছিল। মাকে জানিয়েছিল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঋণ শোধ করবে সে। কিন্তু তার আগেই রবিবার দুপুরের ঘটনা বদলে দেয় হজবিবিডাঙার হাসিবুল শেখের বাড়ির পরিবেশ। মায়ের কাছে খবর আসে, তাঁর ছেলে মারা গিয়েছে।

পাশাপাশি,নবগ্রাম থানার সর্বনগরে বাসিন্দা জিয়ায়ুল শেখ বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। ইচ্ছে ছিল, স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে বসবাস করবেন নতুন বাড়িতে। বাড়ি তৈরির কাজ অসমাপ্ত রেখেই রবিবার দুপুরে মারা যান জিয়াউল। হাসিবুল ও জিয়াউলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া দুই গ্রামে।

মঙ্গলবার ভোরে দেহ বাড়ি ফিরতেই, দুই পরিবারের বাড়িতেই ভিড় করেন প্রতিবেশীরা। এ দিনই তাঁদের দেহ কবর দেওয়া হয় বলে পরিবার সূত্রে খবর। প্রসঙ্গত, মুম্বাইয়ের নাগপাড়ায় একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের জলের ট্যাঙ্কে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় চার জন শ্রমিকের। যার মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলারই রয়েছেন তিন জন শ্রমিক। এর মধ্যে দু'জন শ্রমিকের বাড়ি নবগ্রাম থানা এলাকায়। জিয়াউল শেখ (৩৬) ও হাসিবুল শেখ (১৮)। জিয়াউলের পরিবারের দাবি,প্রায় আট মাস আগে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিল সে। হাসিবুলের পরিবারের দাবি, প্রায় পাঁচ মাস আগে মুম্বাইয়ে কাজে যায় হাসিবুল।

টিন ও টালির ছাউনি দেওয়া বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন জিয়াউলের স্ত্রী টুকু বিবি। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে রবিবার সকালে কথা হয়েছিল। আমাদের বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তাই মিস্ত্রি আসার কথা ছিল, সেই নিয়েই আমাদের ফোনে কথা হয়। এরপরে আর আমার সাথে কথা হয়নি। ওই দিনই দুপুরে আমার কাছে খবর আসে আমার স্বামী মারা গিয়েছে। আমার দুই কন্যা সন্তান। তারা দু’জনেই স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করে।’’ জিয়াউলের প্রতিবেশী আব্দুল শেখ বলেন, ‘‘আমরা রবিবার দুপুরেই বিষয়টা জানতে পারি। মঙ্গলবার ওর দেহ বাড়ি ফেরে। এ দিনই সর্বনগর কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। জিয়াউলের রোজগারে ওদের সংসার চলত। এখন রোজার সময়। যারা রোজা করেননি আমরা তাদের জন্য এ দিন খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম।’’

হাসিবুলের মা তনুজা বিবি বলেন, "আমার সঙ্গে ছেলের কথা খুব বেশি হত না। প্রায় পাঁচ মাস আগে ও কাজে গিয়েছিল। ওর বাবার অপারেশনে আমাদের অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল। তাই ও বাইরে কাজে গিয়েছিল। আমাকে বলেছিল, ধার শোধ করবে।" হাসিবুলের প্রতিবেশী আব্দুল লতিব বলেন, ‘‘আমরা ছোট থেকেই ওকে দেখছি। ভাল ছেলে হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। ওরা ওদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে বাড়ি তৈরি করছিল। সেটাও অসম্পূর্ণ।’’

নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল বলেন, ‘‘দুই পরিবারের সরকারি যে সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত, তা যেন দ্রুত পায়, সেটা আমরা দেখব।’’ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলার তিন জন শ্রমিক মুম্বাইয়ে কর্মরত অবস্থায় মারা যান। আমরা শুনেছি মুম্বাইয়ে নির্মীয়মাণ বহুতলের জলের ট্যাঙ্কে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা মারা যায়। ঠিকাদার সংস্থা ও কোম্পানিগুলি সুরক্ষাবিধি মানছে না। ফলে এমন বিপদ দেখা দিচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nabagram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy