Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আশায় আশাকর্মী, তিন মাস অমিল ভাতা

চার সন্তান আর পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে দিন কাটছে কলাবাড়িয়ার আজিন্নারার। তাঁর কথায়, ‘‘অক্ষম স্বামীর জন্য প্রায় মাসে ওষুধ কিনতে হয়। সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাস দেড়েক থেকে। সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’’

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৩
Share: Save:

নামে ও কাজে মিল রয়েছে আশা কর্মীদের। পোলিয়ো কর্মসূচি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়াতে ডাক পড়ে তাঁদের। স্বাস্থ্য দফতরের হৃদপিন্ড বলতে যা বোঝায়, সেটা হল আশা কর্মীরা। সেই আশা কর্মীরা গত তিন মাস ধরে ভাত না
পেয়ে ধুঁকছেন।

কিন্তু কেন এমন হাল? স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা কেউ জানেন না। তাঁদের সংক্ষিপ্ত জবাব, সরকার অর্থ বরাদ্দ না করার ফলেই এই হাল। মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেবল আমাদের জেলা নয়, গোটা রাজ্য জুড়েই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই আমরা ওই টাকা মিটিয়ে দেব।’’

বছর দেড়েক আগে স্বামী মারা গিয়েছে ডোমকলের শীতলনগর গ্রামের জরিনা খাতুনের। গোটা সংসারের বোঝা তাঁর ঘাড়ে। ভাতার টাকায় কোনও রকমে চলছিল সংসার। সঙ্গে দুই মেয়ের পড়াশোনা। একই অবস্থা হরিহরপাড়ার বিধবা আজিন্নারা খাতুনেরও। ডোমকলের কলাবাড়িয়ার আজিন্নারা বিবি প্রতিবন্ধী স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে অসহায় ভাবে দিন কাটছে।

রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয় ৩০০০ টাকা। এটা মাসিক ভাতা হিসেবেই দেওয়া হয় আশা কর্মীদের। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে কাজের ভিত্তিতে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার পেয়ে থাকেন তাঁরা। ওই গত তিন মাস ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে রাজ্য সরকারের ভাতা, কেন্দ্রীয় সরকারের উৎসাহ ভাতাও। ফলে রাজ্যের কয়েক হাজার কর্মী বিপাকে পড়েছেন।

টাকায় কারও স্বামীর চিকিৎসা, কারও সন্তানের লেখাপড়া বা কোনও রকমে সংসার চলে। ডোমকলের শীতলনগর গ্রামের জরিনা বেওয়া বলেন, ‘‘দেড় বছর হল স্বামী মারা গিয়েছে। গোটা সংসারের হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। এক মেয়ে কলেজে পড়ে, অন্য জন স্কুলে। তারা নিয়মিত স্কুল-কলেজও যেতে পারছে না টাকার অভাবে। পাড়ার মুদির দোকান থেকে পড়শির কাছে নেওয়া ঋণের বোঝা বাড়ছে।’’

চার সন্তান আর পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে দিন কাটছে কলাবাড়িয়ার আজিন্নারার। তাঁর কথায়, ‘‘অক্ষম স্বামীর জন্য প্রায় মাসে ওষুধ কিনতে হয়। সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাস দেড়েক থেকে। সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’’

ডোমকলের আশা কর্মী সংগঠনের সম্পাদিকা ফেরদৌসি বেওয়া বলছেন, ‘‘কর্মীরা অনেকে এসে আমাদের কাছে কান্নাকাটি করছেন। বিডিও থেকে বিএমওএইচকে বলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। আবার কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বাদের ভোট কেন্দ্রে আনার জন্য ফতোয়া দিচ্ছে প্রশাসন।’’ রাজ্য আশা কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদিকা ইসমাতায়ারা খাতুন বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে হাহাকার। সামান্য ভাতার জন্য আশা কর্মীরা যে কি পরিশ্রম করেন, একমাত্র তাঁরাই জানেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subsidy Asha Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE