Advertisement
E-Paper

ধুলোর আড়ালে পরিচয় হারিয়েছে দেওয়ানসরাই

কামিজ থেকে ধুলো ঝেড়ে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা ওড়না খুলে মুখটা একটু আলগা করতেই— চুল যেন তার কবেকার বৃদ্ধার, শন পড়া দড়ির মতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ১২:৪৫
ধুলো-ঢাকা: দেওয়ানসরাইতে। নিজস্ব চিত্র

ধুলো-ঢাকা: দেওয়ানসরাইতে। নিজস্ব চিত্র

কিলোমিটার তিনেক রাস্তা ঠেঙিয়ে সামিরন খাতুন যখন স্কুলের গেটে পৌঁছয় তখন তাকে চেনা দায়।

কামিজ থেকে ধুলো ঝেড়ে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা ওড়না খুলে মুখটা একটু আলগা করতেই— চুল যেন তার কবেকার বৃদ্ধার, শন পড়া দড়ির মতো। শালোয়ারের রং গিয়েছে হারিয়ে। সামিরন একা নয়, লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলে সক্কলের অবস্থাটা এক। ইটভাটার ট্রাক্টর তাদের ধুলো-স্নান করিয়ে পৌঁছে দিয়েছে স্কুলের গেটে। এটাই যেন নিত্য নিয়ম। দেওয়ানরাই পঞ্চায়েত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খান দশেক প্রাথমিক স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের অবস্থাও তথৈবচ। শুধু পডুয়া কেন, গ্রামে রোজকার কাজে বেরনো আটপৌরে মানুষের ধুলো ধুসরিত চেহারাও নতুন নয় এলাকায়।

তবে তা নিয়ে রা কাড়ার সাহস নেই কারও। এলাকায় দশটি ইটভাটার প্রতাপে ধুলো মাখা জীবনেই সায় দিয়েছেন যেন তাঁরা!

তবে, সামনেই বর্ষা, ধুলোয় ইটভাটায় মাটি মজুত করার জন্য ওই এলাকায় এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ’খানেক ট্রাক্টর। আর তার চাকার দৌরাত্ম্য সামাল দিচ্ছে আশপাশের গ্রামীণ মানুষেরা।

লস্করপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘‘ট্র্রাক্টর চলছে দিনভর, মাটি উপচে রাস্তায় পড়ছে, সর্বক্ষণ ধুলো।’’ কুয়াশার মতো হয়ে থাকছে মাঠ-ঘাট, রাস্তা। রাস্তা ছাড়িয়ে সেই ধুলোয় ঢেকে থাকছে বাড়ির উঠোন, ছাদে শুকোতে দেওয়া কাপড়। জানলা খোলাই দায়।

আশঙ্কা এখন বর্যার, বৃষ্টি হলে কাদায় মাখামাখি হয়ে একেবারেই অগম্য হয়ে উঠবে নাতোগাঁ-গঞ্জ!

সেই পিছল কাদার রাস্তায় মোটরবাইক থেকে সাইকেল আরোহীরা হরদম পড়ে জখম হবে, সে প্রায় নিশ্চিত, জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

এ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে, দেওয়ানসরাই মোড়ে সাইনবোর্ড বলছে— ‘জনবহুল এলাকা, দুর্ঘটনা এড়াতে মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ।’ যা দেখে মুচকি হাসছেন এলাকার ফিরোজ শেখ, ‘‘কে কার কথা শোনে বলুন তো, ও লাগাতে হয় লাগানো হয়েছে মাত্র!’’

দেওয়ানসরাই পঞ্চায়তের উপ-প্রধান যোগেশ্বর দাস রাখঢাক না করেই বলেন, ‘‘ওই সব সাইনবোর্ড তো লোক দেখানো। সরকারি বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও আজও কোনও কাজ হয়নি।’’

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সরকারি কর্মীদের একাংশের প্রশ্রয়েই এ কাজ চলছে। যা শুনে, স্থানীয় বিএলআরও সৌমেন দাস বলছেন, ‘‘তলায় তলায় যোগসাজোসের ব্যাপার আমার জানা নেই। তবে ভাটা মালিকদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’’ আর, স্থানীয় ভাটা মালিক ফয়জুদ্দিন জানান, নিয়ম মেনেই মাটি নিয়ে ছুটছে ট্রাক্টর। বলছেন, ‘‘ট্রাক্টর উপচিয়ে মাটি দু-এক জনের পড়ছে হয়তো, তবে তা ইচ্ছাকৃত নয়।’’

roads Lalgola Dewansarai দেওয়ানসরাই লালগোলা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy