Advertisement
E-Paper

সাঁতারে জয়ী ঘরের ছেলেরা, উৎসবে মাতোয়ারা বহরমপুর

দীর্ঘ ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় ‘ঘরের ছেলে’দের জয়-জয়কারে রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় উৎসবের মেজাজে মাতল বহরমপুর। ভাগীরথীর বুকে ররিবার ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় বহরমপুর সুইমিং ক্লাবের রাকেশ বিশ্বাস প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছেন চিরঞ্জীত বিশ্বাস। বহরমপুরের গাঁধী কলোনির বাসিন্দা ওই দু’জন ঘরের ছেলে জয়ী হওয়ায় ভাগীরথীর পাড়ে দাঁড়ানো কয়েক হাজার দর্শনার্থীদের মধ্যে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১২
মহিলাদের ১৯ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা। ৮১ কিমি সাঁতারে প্রথম রাকেশ বিশ্বাস (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

মহিলাদের ১৯ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা। ৮১ কিমি সাঁতারে প্রথম রাকেশ বিশ্বাস (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় ‘ঘরের ছেলে’দের জয়-জয়কারে রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় উৎসবের মেজাজে মাতল বহরমপুর। ভাগীরথীর বুকে ররিবার ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় বহরমপুর সুইমিং ক্লাবের রাকেশ বিশ্বাস প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছেন চিরঞ্জীত বিশ্বাস। বহরমপুরের গাঁধী কলোনির বাসিন্দা ওই দু’জন ঘরের ছেলে জয়ী হওয়ায় ভাগীরথীর পাড়ে দাঁড়ানো কয়েক হাজার দর্শনার্থীদের মধ্যে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। ৮১ কিমি দীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করতে রাকেশ সময় নিয়েছেন ১১ ঘন্টা ২৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ড, চিরঞ্জিতের সময় লেগেছে ১১ ঘন্টা ৩৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড। ওই বিভাগেই তৃতীয় স্থান পেয়েছেন উলুবেড়িয়া অ্যামেচার অ্যাকুয়াটিক ক্লাবের তহরিনা নাসরিন।

৭১ তম ওই সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থা মুর্শিদাবাদ সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন। এদিন সকাল ৫টা ২৫ মিনিটে জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি থানার আহিরণ ঘাট থেকে ৮১ কিমি ও দুপুর দেড়টা নাগাদ জিয়াগঞ্জ সদরঘাট থেকে বহরমপুর গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত পুরুষ ও মহিলা বিভাগের ১৯ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ৮১ কিলোমিটারে ১৮ জনের মধ্যে ৫ জন মহিলা প্রতিযোগী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৬ জন বহরমপুরের, মহারাষ্ট্রের ৪ জন, কর্ণাটকের এক জন, বাংলাদেশের দু’জন এবং বাকি ৫ জন রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাবের। তবে এ দিন জঙ্গিপুরের আহিরণ ঘাট থেকে বহরমপুর গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত ৮১ কিমি প্রতিযোগিতায় যোগ দেন ১৬ জন প্রতিযোগী। দু’জন প্রতিযোগী অনুপস্থিত ছিলেন।

তবে বহরমপুরের ‘ঘরের ছেলে’ ৬ জনের ভাল ফলের আশায় বুক বেঁধে ভাগীরথীর দু-পাড়ে ভিড় করেন বহরমপুর-সহ আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন বহরমপুর গোরাবাজার ঘাটে। এদিন বিকেল ৪টে ৩৫ মিনিটে রাকেশ গোরাবাজারের নিজের চেনা ঘাটে বাঁধা পড়েন, তখন সোল্লাসে ফেটে পড়েন ভাগীরথীর দু-পাড়ের মানুষ। ১০ মিনিটের ব্যবধানে চিরঞ্জিত ‘ফিনিশিং পয়েন্ট’ ছুঁতেই দর্শকরা সোল্লাসে ফেটে পড়েন। রাকেশ ও চিরঞ্জিত কোমর জলে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলতেই পাড় বরাবর দাঁড়ানো হাজার-হাজার দর্শক হাততালি দিয়ে তাঁদের অভিবাদন জানান। ঘাটে পৌঁছানো মাত্র তাঁদের লাল কম্বল গায়ে জড়িয়ে গ্রীনরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে আগে থেকেই চিকিৎসক-নার্সদের নিয়ে গড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের টিম প্রস্তুত ছিলেন। চিরঞ্জিত ঘাটে পৌঁছনোর ২৪ মিনিট পরে তহরিনা কলেজে ঘাটে এসে পৌঁছান।

অন্য দিকে, ১৯ কিলোমিটারে মহিলা বিভাগে ১৪ জন ও পুরুষ বিভাগে ২১ জন প্রতিযোগী ছিলেন। ১৯ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতার মহিলা বিভাগে প্রথম হন কলকাতা কলেজ স্কোয়ারের মধুলেখা হাজরা। তাঁর সময় লেগেছে ২ ঘন্টা ২২ মিনিট ৯ সেকেন্ড। দ্বিতীয় বেলঘরিয়ার সুদেষ্ণা সেন, তৃতীয় হয়েছেন শ্রেয়ন্তী পান। তাঁদের সময় লেগেছে যথাক্রমে ২ ঘন্টা ২৫ মিনিট ১ সেকেন্ড ও ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। এছাড়াও ১৯ কিলোমিটারের পুরুষ বিভাগে সবাইকে টেক্কা দিয়ে তালদি সুইমিং ক্লাবের সদস্য সুজন নস্কর প্রথম স্থান পান। ২ ঘন্টা ১১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে তিনি প্রথম হন। দ্বিতীয় হয়েছেন বিহারের অয়ন বসু ও তৃতীয় বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের পলাশ চৌধুরী। তাঁরা ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ড ও ২ ঘন্টা ১৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে জলপথ অতিক্রম করেন।

এ বছর সবচেয়ে কম বয়সী সাঁতারু হিসেবে মহারাষ্ট্রের নাসিকের সাড়ে ৯ বছরের অনুজ উমেশ উগলেপ ১৯ কিমি বিভাগে এবং ৮১ কিমি বিভাগে কর্ণাটকের ১৩ বছরের নিকিতা শৈলেশ প্রভু ও বহরমপুরের বাসিন্দা ১৪ বছরের সিমরণ ঘোষের উপরেও নজর ছিল দর্শকদের। বহরমপুরের খাগড়া এলাকার বাসিন্দা সিমরন দশম শ্রেণির ছাত্রী।

জেলার সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আশিসকুমার ঘোষ বলেন, “বাংলাদেশ থেকে এ বছর মোট ছ’জন প্রতিযোগী এসেছেন। এছাড়াও মহারাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি ১৭ জন, ত্রিপুরা থেকে ৪ জন, গুজরাত, বিহার ও কর্ণাটক থেকে একজন করে এবং রাজ্যের প্রতিযোগী ছিলেন ২৬ জন।” তিনি জানান, এবারের প্রতিযোগিতায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। ২০১৩ সালে রাজ্য সরকার প্রতিযোগিতা আয়োজনে ৬ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। গত বারের তুলনায় এবার বাজেট বেড়ে যাওয়ায় সরকারের কাছে ১০ লক্ষ টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছে। আশিসবাবু বলেন, “অর্থলগ্নি বিভিন্ন সংস্থা গত বছর পর্যন্ত প্রতিযোগিতা আয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ সাহায্য করেছিল। কিন্তু অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক দিক থেকেও আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে রাজ্য সরকার অর্থ সাহায্য না করলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।”

তবে প্রতিযোগীদের এ বছর পুরস্কার হিসেবে কোনও নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। গত বার পর্যন্ত ৮১ কিমি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের যথাক্রমে ৩০ হাজার, ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। একই ভাবে ১৯ কিমি’র সফল প্রতিযোগীদের নগদ আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয় যথাক্রমে ৫ হাজার, ৩ হাজার এবং ২ হাজার টাকা।

আশিসবাবু বলেন, “আর্থিক অসঙ্গতির মধ্যেও ৮১ কিমি বিভাগে প্রথম তিন জনকে সোনার মেডেল এবং ১৯ কিমিতে পুরুষ ও মহিলা বিভাগের প্রথম তিন জনকে রূপোর মেডেল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৮১ কিমি বিভাগে প্রথম ১০ জনকে এবং ১৯ কিমি বিভাগে প্রথম ৮ জনকে বিভিন্ন ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তবে কোনও নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি।”

swimming competition berhampore state new online state news Baharampur festival swimming wins boy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy