Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
NRC

এনআরসি বিরোধিতায় ‘আঁচতপ্ত’ জেলা শান্ত-জনশূন্য

ফরাক্কা থেকে কান্দি, ডোমকল থেকে বহরমপুর— দোকানপাট, বাজার বন্ধ ছিল দিনভর।

সুনসান: বহরমপুরে গির্জার মোড়ে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

সুনসান: বহরমপুরে গির্জার মোড়ে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

এনআরসি কিংবা নয়া নাগরিকত্ব আইনের আঁচে পুড়েছিল মুর্শিদাবাদ। বাম-কংগ্রেসের ডাকা সেই নয়া আইনের প্রতিবাদে বনধেও সর্বাত্মক সাড়া মিলেছে বলে সিটুর রাজ্য সহ-সভাপতি তুষার দে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এদিনের বনধে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।’’ সুর একই রেখে কংগ্রেসও জানিয়েছে— ‘মানুষ পাশে ছিল বলেই জোর করেও ধর্মঘট প্রতিহত করা যায়নি।’

ফরাক্কা থেকে কান্দি, ডোমকল থেকে বহরমপুর— দোকানপাট, বাজার বন্ধ ছিল দিনভর। সরকারি বাস চললেও তাতে যাত্রী ছিল হাতে গোনা। জেলার এই চেহারা দেখেই বাম-কংগ্রেস, দু’তরফেই সংস্বরে দাবি করা হয়েছে— নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মানুষ যে তাদের পাশে রয়েছে, জেলার সর্বাত্মক বনধ-চিত্র তার প্রমাণ। জেলা তৃণমূল নেতাদের বনধ প্রতিহত করার হুঙ্কার থাকলেও এ দিন পথে শাসক দলের কোনও নেতা-কর্মীকেই প্রায় দেখা যায়নি। জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘এ দিন অফিস-আদালত আর পাঁচ দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল। বাজার খোলা ছিল, রাস্তাঘাটে গাড়িও ছিল। এর পরেও বলতে হবে জনজীবনও স্বাভাবিক ছিল না!’’ কিন্তু ‘সর্বাত্মক বনধে’ বিরোধিতায় তৃণমূলকে পথে নামতে দেকা গেল না কে? আবুর জবাব, ‘‘জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। আমাদের পথে নামার কোনও প্রয়োজনই হয়নি।’’

শাসক দলের সুরেই জেলা প্রশাসনের দাবি, সরকারি দফতরে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর বলেন, ‘‘এদিন সরকারি অফিসগুলিতে একশো শতাংশ কর্মচারি উপস্থিত ছিলেন। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ একই কথা, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিং যাদব বলেন, ‘‘বনধকে ঘিরে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ এ দিন জেলার অধিকাংশ স্কুল কলেজও খোলা থাকলেও এবং অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা এলেও পড়ুয়াদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল বলছেন, ‘‘সব স্কুল খোলা ছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কোনও গন্ডগোলের খবর পাইনি।’’

জেলার সুতি এবং ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। তবে ওই এলাকায় দোকাটপাট ছিল বন্ধ। ছবিটা প্রায় একই রকম ডোমকল, জলঙ্গি, হরিহরপাড়া, নওদা বেলডাঙা, লালবাগ থেকে লালগোলায়। সরকারি বাসের দেখা মিললেও দিনভর রাস্তায় বেসরকারি বাস ছিল হাতে গোনা। যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানো হয়েছে। সরকারি বাসের চালকেরা হেলমেট পরে বেরোলেও তাঁদের কোনও অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে হয়নি। তবে রাস্তায় বেসরকারি বাস কম থাকায় ছোট গাড়ির দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। মানুষ বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে ট্রেকার-টেম্পোয় পাড়ি দিয়েছেন গন্তব্যে। মুর্শিদাবাদ বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহা বলছেন, ‘‘লোকজন রাস্তায় কম ছিল। বাসও কম চলেছে। খালি বাস তো আর চালানো যায় না!’’

তবে বনধের মধ্যেও বেলডাঙা এসআরএফ কলেজে থার্ড সেমেস্টারের ইতিহাস পরীক্ষা নেওয়া হয় এ দিন। হরিহরপাড়ার হাজি একে খান কলেজের পড়ুয়ারাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল এই কলেজে। জেলার বেশির ভাগ স্কুল-কলেজেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক হলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল হাতে গোনা। সরকারি কর্মচারিদের উপস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও স্কুল কলেজে পড়ুয়া যায়নি বললেই চলে। অধিকাংশ জায়গায় ব্যাঙ্ক, ডাকঘর বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে, সকাল ৯টা নাগাদ সাগরদিঘি স্টেশনে রেল অবরোধ শুরু করে ধর্মঘটীরা। প্রায় আধঘণ্টা আটকে থাকে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। জঙ্গিপুর এলাকায় বনধের প্রভাব ছিল বেশি। অরঙ্গাবাদ বিড়ি মালিক সমিতির সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলছেন, ‘‘এলাকার ৯০ শতাংশ বিড়ি কারখানায় কাজ বন্ধ ছিল। দোকান বাজারও এদিন বন্ধ ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Bandh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE