Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Abas Yojna

সম্বলহীন বৃদ্ধকে বাড়ি তৈরির খবর দিতে গিয়ে চোখে জল বিডিওর, বড্ড দেরি হয়ে গেল যে!

বৃদ্ধ দম্পতির মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে একটা ভাঙাচোরা বাড়ি। তার টালির চাল চুঁইয়ে বৃষ্টির জল পড়ে। বাঁশের খুঁটিতে পচন ধরেছে। জায়গায় জায়গায় ধসে পড়েছে মাটির দেওয়ালও। মেরামতির সঙ্গতিও নেই।

অভাবী জুল্লুর বাড়িতে সরকারি পরিষেবার খবর শোনাতে গিয়ে বিডিও শুনলেন, তিনি আর নেই!

অভাবী জুল্লুর বাড়িতে সরকারি পরিষেবার খবর শোনাতে গিয়ে বিডিও শুনলেন, তিনি আর নেই! নিজস্ব চিত্র ।

প্রণয় ঘোষ
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৪৯
Share: Save:

বছর ছয় আগে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলে। তার পর গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন ৭৭ বছর বয়সি জুল্লু রহমান। বয়স আর দারিদ্রের ভারে ন্যুব্জ বৃদ্ধ একা চলাফেরা করতে পারতেন না। একটা ভেঙে পড়া কুঁড়েঘরে কোনও রকম বসবাস। কিছু একটা করা দরকার বৃদ্ধ ও তাঁর পরিবারের জন্য। নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের থানারপাড়ার থানার গমাখালি গ্রামের জুল্লুর জন্য প্রশাসন যখন কিছু করল, তখন দেরি হয়ে গিয়েছে। আবাস যোজনায় বাড়ি হবে জুল্লুর— এই খবর দিতে গিয়ে বিডিও শুনলেন জুল্লু আর বেঁচে নেই!

ব্লকের উন্নয়নমূলক কাজে সমীক্ষায় বেরিয়ে জুল্লুর খবর কানে গিয়েছিল করিমপুর-২-এর বিডিও সামসুজ জামানের। জুল্লুর ঠিকানায় পৌঁছে তিনি দেখেন সত্যিই তো! অসহায় বৃদ্ধ দম্পত্তির মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে একটা ভাঙাচোরা বাড়ি। তার টালির চাল থেকে বৃষ্টির জল পড়ে। বাঁশের খুঁটিতে পচন ধরেছে। জায়গায় জায়গায় ধসে পড়েছে মাটির দেওয়ালও। ঘরটা যে মেরামত করবে তেমন লোকও নেই পরিবারে। সঙ্গতিও নেই। প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করে জেলা প্রশাসনের কাছে বিডিও নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন যাতে বৃদ্ধের জন্য একটা বাড়ি করে দেওয়া যায়।

আবাস যোজনার তালিকা এসে পৌঁছেছে ব্লক অফিসগুলিতে। অবশেষে আবাস ক্লাস যোজনার সুবিধা প্রাপকের তালিকায় নাম এসেছে জুল্লুর। উচ্ছ্বসিত বিডিও খোঁজ করতে যান জুল্লুর। কিন্তু আর তো বেঁচে নেই সে বৃদ্ধ। স্ত্রী জানান, মাস ছয়েক হল মারা গিয়েছেন তিনি। যে আনন্দ নিয়ে জুল্লুকে বাড়ির খবর পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন, তার থেকে কয়েক গুণ বিষাদে ভারাক্রান্ত যায় বিডিওর মন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘‘সবই হল। কিন্তু উনি তো দেখে গেলেন না।’’ চিক চিক করে ওঠে বিডিওর চোখ। হয়তো ভাবলেন জুল্লুর জন্য এই সরকারি লাল ফিতের ফাঁস একটু দেরি হয়ে গেল।

বৃদ্ধের বিধবা খুদুজান বিবির কথায়, ‘‘রাতদিন এই ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে অসুস্থ স্বামী শুধুই অপেক্ষা করেছেন একটি ঘরের। বিডিও সাহেবের উদ্যোগে ঘরটা পেলাম ঠিকই। কিন্তু সে মানুষটির তো থাকা হল না।’’ এ সব শুনে বিডিও সামসুজ বলেন, ‘‘বার্ধ্যক্যভাতাটা অতি দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। সরকারি পোর্টাল খুললেই ওঁর নাম নথিভুক্ত করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abas Yojna Died BDO Karimpur Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE