Advertisement
E-Paper

জিতেই ঘর ছাড়তে হল

এত কাণ্ডের পরে তৃণমূলের  প্রাধান্যে দাঁত ফুটিয়ে যে সব বিরোধী ভোটে লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন ঘরছাড়া। বিজেপি থেকে বাম, কংগ্রেস থেকে নির্দল— এমন অভিযোগ অবিরাম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০০:২২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ভোটের প্রথম দফায় বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, মনোনয়ন পেশ করতে প্রতি পদে বাধা পাচ্ছেন তাঁরা। বাঁশ-লাঠি-উইকেটের সেই শাসন উজিয়ে যাঁরা নাম তুলেছিলেন ভোটের-লড়াইয়ে, অভিযোগ ছিল, তাঁদের উপরে নেমে এসেছিল নাম-প্রত্যাহারের শাসানি।

এত কাণ্ডের পরে তৃণমূলের প্রাধান্যে দাঁত ফুটিয়ে যে সব বিরোধী ভোটে লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন ঘরছাড়া। বিজেপি থেকে বাম, কংগ্রেস থেকে নির্দল— এমন অভিযোগ অবিরাম।

নির্বাচনের দিন থেকে পরিবারের সকলকে নিয়ে বাড়ি-ছাড়া তাহেরপুর থানার খিসমা পঞ্চায়েতের নির্বাচিত নির্দল প্রার্থী নাড়ুগোপাল হালদার। এমনকী, বুধবার পুর্নর্নিবাচনের দিনও তিনি এলাকায় ঢুকতে পারেননি। বৃহস্পতিবার মিলনবাগান হাইস্কুলের গণনা কেন্দ্রে এসেছিলেন, তৃণমূল প্রার্থী সুভাষ বিশ্বাসকে ৩২ ভোটে হারিয়ে নির্বাচিতও হয়েছিলেন। তবে, শংসাপত্র নিয়ে গ্রামে ফেরা হয়নি। তাঁর স্ত্রী হীরা হালদার, যিনি ওই পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্য, তাঁকে বলে গিয়েছেন, ‘‘দেখি ওদের হাত থেকে বাঁচতে পারি কিনা, তা হলে দেখা হবে!’’ ভোটের দিনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হয়েছিল তাঁর সতেরো বছরের ভাইপো। গুলি লেগেছিল বুকে। পালিয়ে বেড়ানো নাড়ুগোপাল আহত ভাইপোকে দেখতেও যেতে পারেননি হাসপাতালে।

গোপন ডেরা থেকে নাড়ুগোপালবাবু বলেন, “এলাকায় গেলেই আমার উপর আক্রমণ হবে। সুযোগ পেলে মিথ্যা মামলায় জড়াবে। এ সব কারনে এলাকায় আপাতত যাচ্ছি না। শুনতে পাচ্ছি, বাড়ি ছাড়া হওয়ার সুযোগে ঘর থেকে অনেক কিছু খোয়া গিয়েছে।’’

প্রায় একই অভিজ্ঞতা, সপরিবারে বাড়ি ছাড়া মুর্শিদাবাদের মানিজা বিবির। বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের সময় দুপুর থেকে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ১ ব্লকের হনুমন্তনগর পঞ্চায়েতের চর বিনপাড়া গ্রামের ৫ নম্বর সংসদের মানিজা সপরিবার আত্মগোপন করেছেন এক আত্মীয়ের কাছে। শনিবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের হাত প্রতীকে জেতা মানিজার স্বামী নবী শেখ বলেন, ‘‘আমাদের প্রাণ নিয়ে টানাটানি চলছে, তাই লুকিয়ে রয়েছি। ফোন করবেন না।’’

ভোটের দিন সকাল থেকে ব্যাসপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট ঘিরে কোনও উত্তাপ ছিল না। ছবিটা বদলে যায় দশটার পর। বহিরাগত দুষ্কৃতীরা এসে এলাকা দখল নেয়। এলাকার মানুষের অভিযোগ, তৃণমূল প্রার্থী হেরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে, তারা বোমা ফাটায় চালাতে থাকে গুলি। তাতেই আহত হয়েছিল বিশ্বজিৎ হালদার।

মাজিনার অভিজ্ঞতাও বলছে, ভোটের দিন তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিটি বুথে হামলা চালায় এবং বুথ দখল করে অবাধে ছাপ্পা ভোট দেয়। কিন্তু চরবিনপাড়ার বুথে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা রুখে দাঁড়িয়ে ছিল। ফলে ওই বুথ দখল করতে পারেনি তৃণমূল। ব্যালট বাক্স লুঠ করলেও সে ভোটে জয়ী হয়েছেন মাজিনাই।

তবে এর পর থেকেই ঘর ছাড়া তিনি। বলছেন, ‘‘ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না। জানি না জিতেই কাল হল কি না!’’ যা শুনে দুই জেলা কর্তাদের কাছে পাওয়া গিয়েছে নির্বিকার উত্তর— আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি তো!

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Poll TMC BJP Congress CPIM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy