Advertisement
E-Paper

সমিতির কুর্সি দখলে তৎপরতা শাসক দলে

ভোট মিটতে না মিটতেই বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। দলীয় সূত্রেই খবর, কোথাও কোনও কোনও নেতা ওই পদে নিজেই বসতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। কোথাও ঘনিষ্ঠ পরিজনের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০২:০৭

ভোট মিটতে না মিটতেই বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে শাসকদলের অন্দরে। দলীয় সূত্রেই খবর, কোথাও কোনও কোনও নেতা ওই পদে নিজেই বসতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। কোথাও ঘনিষ্ঠ পরিজনের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা। শাসকদলে এ ভাবেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আভাস মিলেছে। প্রকাশ্যে অবশ্য সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি জেলা নেতৃত্বের এক্তিয়ারভুক্ত বলে জানাচ্ছেন সবাই।

নানুরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদের জন্য বিভিন্ন নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় সূত্রে খবর, মূলত দু’টি নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। একটি ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের স্ত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। অন্য জন জেলা পরিষেদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খানের অনুগামী হিসেবে পরিচিত তথা হোটেল ব্যবসায়ী অখিলবন্ধু পাল।

তৃণমূলের নেতাদের একাংশের দাবি, নানুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা অখিলবাবুকে সভাপতি করতেই নওয়ানগর–কড্ডা পঞ্চায়েত এলাকায় মনোনয়ন দিয়েছেন কেরিম খান। অখিলবাবুকে সভাপতি হিসেবে মানতে নারাজ সুব্রতবাবুর অনুগামীরা। সভাপতি হিসেবে কোনও ভাবে কৃষ্ণাদেবীর নাম বিবেচিত না হলে তাঁর বিকল্পে সুব্রতবাবুর অনুগামীরা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি মধুসূদন পালের নাম নিয়েও আলোচনা শুরু করেছেন। তাঁদের যুক্তি, সহ-সভাপতি হিসেবে মধুসূদনবাবুর পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

কেরিম খানের ঘনিষ্ঠ মহল পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এর আগে সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ‘আপার’ নানুর এলাকা থেকে। এ বার ‘লোয়ার’ নানুর এলাকা থেকে নির্বাচিত কাউকে সভাপতি করা হোক।

নানুরের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মূলত কীর্ণাহার ১, ২ ও দাসকলগ্রাম-কড়েয়া ১, ২ পঞ্চায়েত ‘আপার’ নানুর এবং বাকি পঞ্চায়েতগুলি ‘লোয়ার’ হিসেবে পরিচিত। বিদায়ী সভাপতি বানী সাহা ও মধুসূদনবাবু ‘আপার’ নানুরের দাসকলগ্রাম-কড়েয়া-২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। অখিলবাবু ‘লোয়ার’ নানুর এলাকা থেকে নির্বাচিত। স্বভাবতই ‘আপার-লোয়ার’ তত্ত্ব নিয়ে টানাপড়েন চলছে। সুব্রতবাবু এবং কেরিম খান অবশ্য একই সুরে বলেছেন— ‘কে সভাপতি হবেন তা জেলা নেতৃত্বই স্থির করবেন।’

একই মন্তব্য করেছেন লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী এবং স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের জেলা সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান। লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আসন এ বার মহিলাদের জন্য বরাদ্দ। সেখানে বৌমা সাবিনা খাতুনকে সভাপতি করার জন্য আব্দুল মান্নান তৎপর হয়েছেন বলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে। দলের এক অংশের নেতাদের তা পছন্দ নয়। তাঁরা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান ছবি পালকেই ফের সভাপতি করার দাবি তুলেছেন।

দলের অন্দরমহলের খবর, মানান সাহেব নিজের অবস্থানে অনঢ় থাকায় এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের কাছে ধমক খেয়েছেন। তার জেরে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্বও তৈরি হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘‘অসুস্থতার জন্য কোথাও যেতে পারছি না। এর বেশি কিছু বলতেও পারব না।’’

ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ নিয়ে জেলা পরিষদের বিদায়ী খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডলের সঙ্গে দড়ি টানাটানি চলছে ব্লক সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রের। এক সময় দলের জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন জটিলবাবু। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি বিধানসভার টিকিট না পেয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করতে দিয়ে জেলা সভাপতির বিষ-নজরে পড়ে যান জটিলবাবু। সেই সময় প্রকাশ্য সভায় জেলা সভাপতিকে বলতে শোনা গিয়েছিল— ‘ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকে নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্রই শেষ কথা।’ সেই হিসেবে জেলা নেতৃত্বের পছন্দের হিসেবে নারায়ণবাবু এগিয়ে। কিন্তু জটিল-অনুগামীরা তাঁকে মানতে নারাজ। সমাধানসূত্র হিসেবে দলের অন্দরেই উঠে এসেছে ব্লক যুব সভাপতি চন্দ্রনীল ঘোষের নাম। যুবসমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি এর আগে কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কিন্তু তিন জনই জানিয়েছেন, জেলা নেতৃত্বই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে শোনা যাচ্ছে বিদায়ী জেলা পরিষদ সদস্য বনানী রায় এবং বিদায়ী জেলা পরিষদ সদস্য সুখেন মণ্ডলের মেয়ে সাগরিকা মণ্ডলের নাম। দলীয় সূত্রে খবর, কর্মীদের সমর্থনের নিরিখে অনেক এগিয়ে রয়েছেন বনানীদেবী। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, দল যা চাইবে তাই হবে। অন্য দিকে এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে মেয়েকেই সভাপতি হিসেবে দেখতে চান সুখেনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে সভাপতি করা হবে বলেই দল ওই আসন সাধারণ করেছে। সে জন্যই মেয়েকে ভোটে প্রার্থী করেছি।’’ এ নিয়ে অভিজিৎবাবু বলেছেন, ‘‘আমার কিছু জানা নেই। যা করার দল করবে।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 President Panchayat Samiti পঞ্চায়েত সমিতি Group Clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy