উত্তরবঙ্গের ছয় জেলাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনা ছিল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-এর! এসটিএফ (স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স) সূত্রে খবর, তাদের জেরার মুখে এই দাবি করেছেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত জেএমবি (জামাত-উল-মুজাদিহিন বাংলাদেশ)-র সদস্য তারিকুল ইসলাম। এর আগে তাঁকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এসটিএফ। তাঁকে আরও জেরার প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে বহরমপুর আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন মেনে তারিকুলকে তিন দিনের জন্য এসটিএফ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। সূত্রের খবর, তার পরেই তারিকুলকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে এই মামলায় বাকি ধৃতদের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
এসটিএফ সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে আত্মগোপন করেছিলেন তারিকুল। সেই সময় তারিকুলকে আশ্রয় দিয়েছিলেন অসমের বাসিন্দা তথা আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য নুর ইসলাম। ২০১৫ সালে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) তারিকুলকে গ্রেফতার করে। বিচারপর্ব শেষে তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়। গোয়েন্দারা জেনেছেন, এবিটি-র শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে জেলের ভিতরেই তারিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নুর। প্রাথমিক ভাবে তারিকুলের পরিবারের কাছে তিন লক্ষ টাকা নগদ পৌঁছে দিয়েছিল সে-ই। অভিযোগ, জেলে বসে সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন তারিকুল। ফেরার অনুচরদের ‘আশ্রয়’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবিটি-র সঙ্গে যুক্ত করেন তিনি। গোয়েন্দারা আরও জানতে পারেন, এবিটি-র বাংলাদেশি শীর্ষ প্রধানদের সঙ্গে ভিডিও কলে ‘মাকসাদ-এ-জিহাদ’ নামে একটি আলোচনাচক্রে অংশ নিয়েছিলেন তারিকুল। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, মুর্শিদাবাদ, মালদহ , উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরি করা হবে। প্রাথমিক ভাবে মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করে এবিটি।
আরও পড়ুন:
অসম থেকে ধৃত নুর মোহাম্মদ ও শাহিনুর ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফ জানতে পারে, পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই সরাসরি আর্থিক মদত দিয়েছিল জেএমবি জঙ্গি সংগঠনকে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের পর জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সংগঠন ঝিমিয়ে পড়ে। অন্য দিকে, বৃহত্তর বাংলাদেশ না কি ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে নাশকতা— কোন লক্ষ্যে এগোবে জঙ্গি সংগঠন সেই নিয়ে জেএমবির পাকিস্তানি ও বাংলাদেশ নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে জন্ম নিয়েছিল এবিটি। আত্মঘাতী জঙ্গি তৈরি করে বড়সড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ওই জঙ্গি সংগঠনের বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। ধৃত তারিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই সংগঠন সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী দল। ধৃতকে আবার হেফাজতে নিয়ে এ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ‘লিঙ্কম্যান’দের গ্রেফতার করতে চাইছে এসটিএফ।