Advertisement
E-Paper

চেনা ছেলের কীর্তিতে অবাক সকলে

ছোটবেলায় প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে ছিপ নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাছ ধরার ভীষণ নেশা তাঁর। এখনও সুযোগ পেলে পুকুর পাড়ে ছিপ নিয়ে বসেন। 

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৬
মা-বাবা ও মেয়ের সঙ্গে স্বাধীন। নিজস্ব চিত্র

মা-বাবা ও মেয়ের সঙ্গে স্বাধীন। নিজস্ব চিত্র

ছোটবেলায় প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে ছিপ নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাছ ধরার ভীষণ নেশা তাঁর। এখনও সুযোগ পেলে পুকুর পাড়ে ছিপ নিয়ে বসেন।

আর ভালবাসতেন অঙ্ক কষতে। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় দশম শ্রেণির একটি অঙ্ক কষতে দিয়েছিলেন বাবা। খুব কম সময়ের মধ্যে নির্ভুল উত্তর দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই শুরু। কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে তরল জ্বালানি তৈরির উপায় বার করে ফের তাক লাগিয়েছেন সকলকে। তার পুরস্কারও জুটেছে। এ বছর রসায়নে ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর’ পুরস্কার পেলেন কমিরপুরের স্বাধীন মণ্ডল।

স্বাধীনের এই সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার ও গ্রামের মানুষ। ২৬ তারিখ দেশের মোট ১২ জনের নাম এই পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হয়। তাঁদের মধ্যে স্বাধীন একজন।

স্বাধীন বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ সেন্টার’-এ কর্মরত। পুরস্কার ঘোষণার খবর জানতে পেরে এলাকার মানুষ থেকে প্রশাসনের কর্তারা স্বাধীনের বাড়িতে ভিড় জমান। শুক্রবার রাতেই স্বাধীন বাড়ি ফেরেন। শনিবার সকাল থেকেই এলাকার পরিচিত মানুষজন, ছোটবেলার বন্ধু কিংবা আত্মীয়েরা এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে যান।

বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পাশ করে তিনি ভর্তি হন মহিষবাথান স্কুলে। সেখান থেকে সপ্তম শ্রেণি পাশ করেন। এর পর বাড়ি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে করিমপুর জগন্নাথ স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৯০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এর পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন নিয়ে বিএসসি-তে তৃতীয় ও ১৯৯৫ সালে এমএসসি-তে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

স্বাধীন ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল অবধি গবেষণার কাজে ব্যাঙ্গালোরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’-এ প্রফেসর এসএস কৃষ্ণমূর্তির তত্ত্বাবধানে গবেষণার কাজ করেছেন। সেখান থেকে ২০০২ সালে যান আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডে। সেখানে রবার্ট হ্যাডনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। জার্মান সরকারের আলেকজ়ান্ডার ফন হামবোল্ট ফেলোশিপ করতে ২০০৬-২০০৭ অবধি জার্মানির গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ নেন।

উল্লেখ্য, ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই আইনস্টাইন, হাইজেন, ম্যাক্সপ্লাম-সহ ৪৭ জন নোবেল পুরস্কার প্রাপকের পড়াশোনা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে নিয়ম অনুযায়ী, জার্মানির প্রেসিডেন্ট পড়ুয়াকে এক দিনের জন্য বাড়ির অতিথি হিসেবে রাখেন। যে সুযোগ স্বাধীনেরও হয়েছিল।

এ দিন বাড়ির বারান্দায় পরিবারের সঙ্গে বসে স্বাধীন গল্প শোনান সে সব দিনের। বলেন, ‘‘এত ব্যস্ততার মধ্যেও গ্রামকে কখনও ভুলিনি। সময় পেলেই চলে আসি।’’

বাতাসের বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস থেকে তরল জ্বালানি মিথানল বানানো ও শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সেখান থেকে কীটনাশক তৈরি করেছেন বিজ্ঞানী স্বাধীন। স্ত্রীয়ের অনুপ্রেরণাতেই তাঁর এই পুরস্কার, সে কথাও জানাতে ভোলেননি। মেয়ে এথিনা বলে, ‘‘এক বছর আগে মা মারা গিয়েছেন। বাবার সাফল্য মা দেখে গেলেন না। বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন মা-ই।’’

Bhatnagar prize Swadhin Mandal ভাটনগর পুরস্কার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy