Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ভোটের সকাল শান্তিতে, রাতে অশান্তি জঙ্গিপুরে

ভোট মিটতেই ফের অশান্ত জঙ্গিপুর। শনিবার রাতে শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত হলেন দু’দলের ৬ জন। সকলেই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এঁদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুবীর দাস ও তাঁর দুই ভাই রয়েছেন। কংগ্রেস প্রার্থীর দুই ভাসুর ও এক দলীয় কর্মীও চিকিৎসাধীন।

জঙ্গিপুরে ভোট দেওয়ার লম্বা লাইন। শনিবার অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

জঙ্গিপুরে ভোট দেওয়ার লম্বা লাইন। শনিবার অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

ভোট মিটতেই ফের অশান্ত জঙ্গিপুর।

শনিবার রাতে শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত হলেন দু’দলের ৬ জন। সকলেই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এঁদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুবীর দাস ও তাঁর দুই ভাই রয়েছেন। কংগ্রেস প্রার্থীর দুই ভাসুর ও এক দলীয় কর্মীও চিকিৎসাধীন। সংঘর্ষে কারও হাত ভেঙেছে, কারওবা মাথা ফেটেছে। দু’টি দলের পক্ষ থেকেই রঘুনাথগঞ্জ থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি দুটি দলের ৬ জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জঙ্গিপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গত দু’বার কংগ্রেস প্রার্থী শান্তা সিংহ জয়ী হয়েছিলেন। এ বার সেখান থেকে কংগ্রেসেরই দুই কর্মীর একজন বিজেপি থেকে, অন্য জন তৃণমূল থেকে প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা ছিল। বিজেপি-র জেলা সহ সভাপতি অনমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শনিবার রাতে সুবীরবাবু বাড়িতেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন কংগ্রেস প্রার্থী শান্তা সিংহের উপস্থিতিতে বাড়িতে চড়াও হয় কংগ্রেসের লোকজন। বাড়িতে ঢুকে চলে ভাঙচুর। পুলিশ এসে সকলে চম্পট দেয়।’’ শান্তা সিংহের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘রাত সাড়ে ৯টা আমার দুই ভাসুর ও প্রতিবেশি এক কংগ্রেস কর্মীর উপরে পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সুবীরবাবু-সহ কয়েক জন বিজেপি কর্মী।’’ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়েই এই হামলা, দাবি শান্তাদেবীর।

ভোটের রাতের এই গোলমাল বাদে ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুর দুটি এলাকাতেই ভোট মিটেছে মোটের উপরে শান্তিতে। গত দু’সপ্তাহ ধরে একের পর এক অশান্তি ও সংঘর্ষ ঘটেছে দুই শহরেই। ফলে দুই পুরসভাতেই ভোটের দিনে সন্ত্রাসের আশঙ্কা ছিল। ধুলিয়ানে শুক্রবার মাঝরাতে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী হাসেন বিশ্বাস বাদশাকে পাড়ার তৃণমূল অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে তার ডান হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আমরুল মহালদার পাল্টা অভিযোগ করেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার রাতে এক দল বহিরাগত প্রাণে মারার চেষ্টা করেন।’’

শনিবার সমস্ত আশঙ্কা কাটিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট হওয়ায় খুশি শাসক-বিরোধী সকলেই। বিরোধীরা এর কৃতিত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিকে। সারা রাজ্যে যখন পুরভোট নিয়ে রাজ্য পুলিশের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে তখন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের ভূমিকা ছিল তুলনামূলক নিরপেক্ষ। কেমন?

মুর্শিদাবাদের প্রতিটি পুর-এলাকাতেই ছিল পুলিশের নাকাবন্দি। কান্দির বড়ঞা ব্লকের তৃণমূল সভাপতি জালালুদ্দিন আফাজ চারটি গাড়িতে পুর-এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের নিয়ে ঢুকছেন—এই মর্মে পুলিশকে অভিযোগ জানান ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তথা পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান গৌতম রায়। খবর পাওয়া মাত্রই সক্রিয় হন মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি উপস্থিত পুলিশ কর্মীদের নিয়ে গাড়িটির পিছু ধাওযা করে এলাকা ছাড়া করেন। কান্দির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে ওই ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী সোমা রায়ের অভিযোগ। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বান্ধব সমিতি বুথের সামনে কংগ্রেসের এক কর্মীর দিকে তেড়ে যান ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের এক প্রার্থীর স্বামী। বিষয়টি জানতে পেরেই ছুটে আসে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী। তৃণণূলের নেতা-কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে হঠাতে লাঠি উঁচিয়ে তেড়েও যায়। এতে কিছু ক্ষণের মধ্যেই এলাকা শান্তি হয়ে যায়।

অন্য দিকে, বেলডাঙাতেও পুরভোট হয়েছে শান্তিতেই। প্রশাসনের হিসাবে ভোট পড়েছে ৮৭.৪২ শতাংশ। এই পুরভোটে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। পুরভোটের পরে বেলডাঙার ১৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সব রাজনৈতিক দলই। কংগ্রেসের শহর সভাপতি ভরত ঝাওর বলেন, ‘‘আমরাই ফের ক্ষমতায় আসছি।’’ সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য প্রিয়রঞ্জন ঘোষ আবার বলেন, ‘‘চারিদিক থেকে যা হিসাব পাচ্ছি, তাতে আমরাই এগিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE