E-Paper

তৃণমূল কুম্ভমেলা ‘হাইজ্যাক’ করতে  চায়, দাবি সুকান্তের

এ দিন কল্যাণীর উপান্তে মাঝের চরে ওই মেলা প্রাঙ্গণে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, তৃণমূল এই মেলা ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা করছে।

অমিত মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪১
বঙ্গ কুম্ভমেলার শোভাযাত্রার ‘লাইভ’ করছেন এক সাধু। কল্যাণী মাঝের চরে সোমবার। নিজস্ব চিত্র

বঙ্গ কুম্ভমেলার শোভাযাত্রার ‘লাইভ’ করছেন এক সাধু। কল্যাণী মাঝের চরে সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ভিড় যে হবে, তা আগের রাতেই বোঝা গিয়েছিল। তবে সোমবার ‘বঙ্গ কুম্ভমেলা’য় শোভাযাত্রা ও ‘শাহি স্নানে’ আগের সন্ধ্যার মতো তেমন বিশৃঙ্খলা হল না। যদিও সারা দিনে চার-পাঁচ জন বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে একাধিক সূত্রের দাবি। অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও নিয়ে যাওয়া হয়।

যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন প্রায় চার লক্ষ দর্শনার্থী মেলাস্থলে এসেছেন। সন্ধ্যায় রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্নন বলেন, “মেলায় কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কেউ আহতও হয়নি।”

তবে আদতে পুণ্যার্থীর সমাগমকে ছাপিয়ে উঠল রাজনীতিই। এ দিন কল্যাণীর উপান্তে মাঝের চরে ওই মেলা প্রাঙ্গণে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, তৃণমূল এই মেলা ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা করছে। সুকান্তের কথায়, “তৃণমূলের নেতারা এই অনুষ্ঠান প্রথমে বন্ধ করার জন্য অনেক রকম চেষ্টা করেছে। প্রথমে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তার পর এই অনুষ্ঠান হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছে।”

তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি ধর্মকে সামনে রেখে ভোটবাক্স ভরানোর ছক কষেছে। কিন্তু তারা শাসক দল হিসাবে এই আয়োজনের পাশে রয়েছেন। মেলার অনেকখানি আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার-পোস্টার-তোরণেও রাস্তা ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের আড়াইশো স্থানীয় কর্মী-সমর্থকও মেলায় ‘স্বেচ্ছাসেবক’ হিসেবে কাজ করছেন। মেলায় ঢোকার মুখে আবার বিজেপির জাতীয় ও রাজ্য নেতাদের ছবি সংবলিত তোরণও রয়েছে।

সুকান্তের ‘হাইজ্যাক’ মন্তব্য প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, "একটা কমিটির মাধ্যমে মেলাটা হচ্ছে। সরকার সব রকম সাহায্য করছে। দলও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়। বিজেপি এরক মধ্যে রাজনীতি খুঁজছে কেন?” স্থানীয় কাঁচড়াপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তথা কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি পঙ্কজ সিংহও দাবি করেন, “এর মধ্যে রাজনীতি নেই। প্রশাসনের তরফেই আমরা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” অনেকটা একই সুরে কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়েরও দাবি, “রাজনীতি সরিয়ে রেখে আমরা সকলেই চেষ্টা করছি যাতে মেলাটা সফল হয়।”

রবিবার আচমকা বিপুল জনসমাগম হওয়ায় এবং একটি প্রবেশপথ থাকায় কিছু সময়ের জন্য কার্যত অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ দিন আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সকালে কল্যাণীর কয়েকটি রাস্তায় পদব্রজে আসা পুণ্যার্থীদের যেমন ভিড় ছিল, তেমন টোটো-অটোতেও সমান ভিড় হয়েছে। কল্যাণীর রেল স্টেশনগুলিতেও ভিড় উপচে পড়েছে। তবে এ দিন মেলায় ঢোকা ও বেরনোর দু’টি পথ করা হয়েছে। কাছারিপাড়ার ইটভাটা এলাকা দিয়েও দর্শনার্থীদের যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে।

এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ থেকে পুণ্যার্থীরা ভাগীরথীতে স্নান করতে নামেন। নদিয়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। সকাল ৮টা নাগাদ শোভাযাত্রা বার করা হয়। সেই শোভাযাত্রা বেরিয়ে কল্যাণীর পিকনিক গার্ডেন, বুদ্ধ পার্ক, ইশ্বর গুপ্ত সেতু, কাছারিপাড়া হয়ে মাঝের চর ঘাটে ফিরে আসে।

বিজেপি নেতাদেরও আনাগোনা সমানে চলছে। রবিবার মেলায় এসেছিলেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। এ দিন সকালে আসেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত ও চাকদহের বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ। দুপুরে আসেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার। সুকান্ত ভাগীরথীতে স্নান সেরে মন্দিরে গিয়ে আহুতিও দেন। তৃণমূলের রাজ্যস্তরের নেতারা আসতে পারেন বলে শোনা গেলেও এ দিন কেউ আসেননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kumbh Mela Sukanta Majumdar BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy