Advertisement
E-Paper

বাড়ি থেকে পালিয়ে হেঁটে চল্লিশ কিমি

রাতে টিভি আর দিনে গুলি— বড় মেতে গিয়েছিল ষষ্ট শ্রেণির ছেলেটা। ফল যা হওয়ার হল— ফল বেরোলে দেখে গেল বেশ খারাপ। মায়ের মুখ ঝামটা আর মায়ের গোটা দুই মোক্ষম কিল পিঠে নিয়ে রাগে গজ গজ করে সাত সকালেই বাড়ি ছেড়েছিল ছেলেটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৯
বিষ্ণবাবুর সঙ্গে অনিকেত।

বিষ্ণবাবুর সঙ্গে অনিকেত।

রাতে টিভি আর দিনে গুলি— বড় মেতে গিয়েছিল ষষ্ট শ্রেণির ছেলেটা।

ফল যা হওয়ার হল— ফল বেরোলে দেখে গেল বেশ খারাপ।

মায়ের মুখ ঝামটা আর মায়ের গোটা দুই মোক্ষম কিল পিঠে নিয়ে রাগে গজ গজ করে সাত সকালেই বাড়ি ছেড়েছিল ছেলেটি।

আর বাড়ি থেকে পালিয়ে এক-দুই নয়, পাক্কা সাইত্রিশ কিলোমিটার হেঁটে সে পৌঁছে গিয়েছিল বাহাদূরপুরে।

পকেটে খালি। খিদেও পেয়েছে ঢের। দিনভর ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে এক সময়ে কৃষ্ণনগর ছাড়িয়ে সে পৌঁছে গিয়েছিল একেবারে বাহাদুরপুর। কখনও রাস্তার পাশে বসে একটু জিরিয়ে নিয়েছে তো কখনও তেষ্টা পেলে কলের জল। সারা দিন শুধু হেঁটেই গিয়েছে।

অবসন্ন ছেলেটাকে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল এক ধাবা মালিকের। বিষ্ণু মন্ডলের অভিজ্ঞ চোখ বুঝেছিল কোথাও এতটা ‘গন্ডগোল’ হয়েছে। ছেলেটিকে কাছে ডেকে নাম জিজ্ঞেস করতেই বুঝেছিলেন এ ছেলে বাড়ি পালানো!

বিষ্ণু বলছেন, ‘‘বললাম, কি নাম তোর, বলল, অনিকেত। এ নামে গাঁয়ের ছেলে হয় না। বুঝলাম নিশ্চয় বাড়ি পালানো দুষ্টু ছেলে।’’

জানতে পারেন শান্তিপুর থেকে এতটা পথ সে হাঁটতে হাঁটতে আসছে। তবে কারণ জিজ্ঞাসা করলেই চুপ। তাই কথা না বাড়িয়ে অনিকেতকে স্নান করিয়ে খেতে দেন গরম ভাত। আর খেয়েই ক্লান্ত অনিকেত ঘুমিয়ে পড়ে। বিষ্ণুবাবুও আর ডাকেন নি। পর দিন সকালে ভালো করে চেপে ধড়লে গোটা ঘটনাটা খুলে বলে সে। বাহাদুরপুর গেটপাড়ার বাসিন্দা বিষ্ণুবাবু বলেন, কিছুতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার কারণ বলতে চাইছিল না। পরে রেজাল্টের কারণ বলায় বোঝেন, এ একেবারে ‘বুবুনের’ গল্প।

তিনি বলেন, ‘‘বুধবারই ঠিক করেছিলাম, ছেলেটাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসব। কিন্তু একার হাতে ধাবা চালাতে হয়। সময় করে উঠতে পারছিলাম না।’’ কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে নিজেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ছেলেটি। শুক্রবার সাত সকালেই অনিকেতকে নিয়ে বাসে করে রওনা দিয়েছিলেন শান্তিপুর।

এ দিকে অনিকেতের খোঁজে শান্তিপুরের ঢাকাপাড়া তোলপাড়। রবীন্দ্র বিদ্যাপিঠ হাইস্কুলের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রের খোঁজে মাইকে প্রচার থেকে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি ইতিমধ্যে হয়েছে সবই। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বারবার ফোন। কিছুই বাদ যায় নি। তারপরও ছেলের খোঁজ না মেলায় হতাশ হয়ে গিয়েছিল গোটা পরিবার। ভিতরে ভিতরে আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা। এই অবস্থায় শুক্রবার সাকাল দশটা নাগাদ অনিকেতের মা বিউটি দেখেন যে টোটোয় ছেলে ফিরছে।

বিউটি বলেন, ‘‘পড়ায় মন নেই তাই একটু বকাবকি করেছিলাম।তা ছেলের যে এমন গোঁ কে জানত!’’

আর বিষ্ণু? অনেকটা ফটিকচাঁদের হারুণ অল রশিদের মতো তিনি বলছেন, ‘‘আবার বাহাদুরপুর এলে আমার দোকানে চলে আসিস অনিকেত!’’

Elopes Person Study
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy