আব্দুল সামাদ শেখ। —নিজস্ব চিত্র।
কিছু দিন থেকে সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছিল মারধর। দিদির এমন অবস্থার কথা শুনে বাড়িতে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি আব্দুল সামাদ শেখ (২৪)। জামাইবাবুর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে এসেছিলেন পোয়া গ্রামের ওই যুবক।
অভিযোগ, স্ত্রীর সামনেই সামাদকে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে আজিজুল শেখ। শনিবার সালারের স্বরমস্তিপুর গ্রামের ওই ঘটনার পরে পুলিশ অভিযুক্তদের ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে আজিজুল পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পোয়ার বাসিন্দা রাসিদা বিবির সঙ্গে বছর পনেরো আগে বিয়ে হয় স্বরমস্তিপুরের আজিজুলের। তাঁদের দুই ছেলেমেয়েও আছে। বেশ কয়েক বছর আজিজুল আরবে কাজ করত। সেই সময় ভাল আয় করত। খরচও করত তেমনি। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসার পরে আয় কমলেও খরচে ভাটা পড়েনি। বিয়ের সময় রাসিদা বাবার বাড়ি থেকে প্রায় বারো ভরি সোনার গয়না পেয়েছিল। সম্প্রতি স্ত্রীর সেই গয়নাও আজিজুল বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। অশান্তির সূত্রপাত সেখান থেকেই।
অভিযোগ, প্রায়ই আজিজুল স্ত্রীকে মারধর করত। শুক্রবার রাতেও আজিজুল একই কাণ্ড ঘটায়। শনিবার সকালে আব্দুল সামাদ শেখ, টেঁয়া অঞ্চলের তৃণমূল নেতা মফিজুল মির্জা-সহ জনা দশেক আত্মীয় স্বরমস্তিপুর গ্রামে আজিজুলের বাড়িতে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বচসা শুরু হয়। তার পরেই মারপিট। অভিযোগ, আজিজুল শেখ ও তার আত্মীয়েরা লোহার রড, ধারাল অস্ত্র, কুড়ুল, লাঠি নিয়ে আব্দুল সামাদ শেখ ও তাঁর সঙ্গীদের মারধর করতে শুরু করে। আচমকা আজিজুল কুড়ুল দিয়ে আব্দুল সামাদ শেখের মাথায় কোপ মারে। ওই যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর বুকে ভারী পাথর ফেলে দেয় আজিজুল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
আব্দুলের সঙ্গে থাকা চার জনও গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁরা সালার গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রত্যক্ষদর্শী মফিজুল মির্জা বলছেন, ‘‘আমাদের বোনের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ ও সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে এ ভাবে যে ওরা হামলা করবে তা ভাবতেই পারিনি। তবে ওরা যা করেছে তা পরিকল্পিত ভাবেই করেছে।”
স্থানীয় লোকজন ও আজিজুলের পড়শিদের দাবি, কয়েক দিন থেকেই ওই বাড়িতে অশান্তি চলছিল। আজিজুল স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের উপরে অকারণে অত্যাচার করত। কিন্তু এ ভাবে যে সে খুন করে ফেলতে পারে তা ভাবতে পারছেন না কেউই। আব্দুলের দিদি রাসিদা বলছেন, ‘‘কিছু বলতে গেলেই মারধর করত। গয়নাগুলো কেড়ে নিয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম বন্ধক দিয়েছে। পরে শুনি, সে সব বিক্রি করে দিয়েছে। সে টাকারও কোনও হিসেব নেই। এ দিকে কিছু বলতে গেলেই বাড়িতে অশান্তি। সেই জন্যই ওকে বোঝাতে এসেছিল আমার ভাইয়েরা। সেখানে আমার স্বামী ভাইটাকে চোখের সামনে মেরে ফেলল।”
পুলিশ ওই ঘটনার পরে আনোয়ারা বিবি, আসরফা বেওয়া, সারিফা বিবি, হাফিজা বিবি, ইব্রাহিম মোল্লা ও রেশমিনা বিবিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিশ সরকার বলেন, “পারিবারিক অশান্তির জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy