বিশ্বকর্মা পুজোর আগে চড়ল ফুলের দাম। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
‘‘ফুলে তো আগুন লেগেছে দেখছি! হাতই দেওয়া যাচ্ছে না!’’
ক্রেতার কথার উত্তরে দোকানি হেসে বলেন, ‘‘দুয়ারে বিশ্বকর্মা, ফুলে আগুন।’’ গত পাঁচ দিন আগেও যে রজনীগন্ধা ফুলের মালা ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত, তার দাম সহসা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। গাঁদার মালা ৫-৬ টাকা থেকে হয়েছে ১০-১৫ টাকা। দোকানির কাছেই জানা গেল, সব ফুলের দামই কম বেশি বাড়লেও সব চেয়ে বেশি দাম বেড়েছে গাঁদা আর রজনীগন্ধার। দাম বাড়ার পিছনে শুধুই যে বিশ্বকর্মা পুজো রয়েছে তা নয়, বৃষ্টি, চাষের জমিতে জল জমে যাওয়াও এর একটা বড় কারণ বলেই জানাচ্ছেন অধিকাংশ ফুল চাষিরা।
বৃষ্টি আর চাষের মাঠে জল জমে যাওয়ার কারণে এ বছর রজনীগন্ধার ফলন ভাল হয়নি। অনেক গাঁদা ফুল গাছেই পচে যাচ্ছে বৃষ্টির কারণে। অনেক ক্ষেত্রে জমিতে ফুলের ফলন প্রায় অর্ধেক বা তারও কম হয়ে গিয়েছে বলেও জানালেন অনেক ফুল চাষি। শ্যামপুরে ফুলের পাইকারি বাজারে গাঁদা ফুল বিক্রি করতে আসা ফুল চাষি ভালুকার স্বপন সরকার, নৃসিংহদেব তলার আনন্দ দয়ালীরা বলছেন, ‘‘ফুলের দাম কয়েক দিন হল বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু বৃষ্টি আর মেঘলায় মাঠে ফুলের এতটাই ক্ষতি হয়েছে যে, এই দাম বাড়াতে সে ক্ষতির কিছুই পূরণ হবে না।’’
নদিয়া জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ গাঁদা, রজনীগন্ধা-সহ বিভিন্ন ফুলের চাষ করেন। এই বছর বৃষ্টিতে সর্বত্রই ফুলচাষে কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে বলেই মত জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ফুল চাষিদের। রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাপক হারে ফুল চাষ হয়। বর্তমানে ফুলের চাষ বাড়ছে চাকদহ এলাকাতেও।
রানাঘাটের উত্তরপাড়ার ফুলচাষি শ্যামল সন্ন্যাসীও জানালেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাঁদের এলাকায় গাঁদা ফুলের চাষের বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। যাঁরা কিছুদিন আগে হিমঘরে ফুল স্টোর করে রেখেছিলেন, ফুলের দাম বাড়ায় তাঁরা লাভবান হলেও বাকিরা, যেমন চাষি, পাইকার খুচরো বিক্রেতা বা ফুলের মালা বানান যাঁরা, তাঁদের কেউই সে ভাবে লাভবান হননি।
গৌরাঙ্গ কলোনির ফুলের পাইকারী ব্যবসায়ী দশরথ মোদক বলেন, ‘‘গত বছর বিশ্বকর্মা পুজোর সময় এক কেজি রজনীগন্ধার দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সেটা এই বছর বেড়ে হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। গাঁদার কুড়িটি মালা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৯০ টাকা। এ বছর সে দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তা-ও পর্যাপ্ত মিলছে না।’’
একই সুরে ধানতলা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা অনন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘কালিনারায়ণপুর ফুল বাজার থেকে ফুল কিনে বিহার, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে বিক্রি করি। কিন্তু এখন ফুলের আকালে চাহিদামতো ফুল পাচ্ছি না। তার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেড়ে যাওয়া দাম।’’ কৃষ্ণনগর পোস্টঅফিস মোড়ের ফুল বিক্রেতা বুদ্ধ মোদক বলেন, ‘‘ষাট টাকার এক ডজন রজনীর স্টিকের এখন বিক্রির দাম ১৬০ টাকা। দাম শুনেই অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন।’’
গাঁদা, রজনীগন্ধার মালা গেঁথে সংসার চলে যাঁদের, ফুলের দাম বাড়ায় তাঁদের রোজগার কমেছে। বিয়ের অনুষ্ঠান এখন নেই। এর মধ্যে ফুলের দাম বাড়ায় খুচরো মালা বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে মালা গাঁথার কাজ কমেছে।
সুবর্ণবিহারের গৌরাঙ্গ কলোনির গঙ্গা মোদক, মিনতি মোদকেরা বলেন, ‘‘একশোটি রজনীর মালা গাঁথলে ২৫ টাকা মেলে। ফুলের দাম বাড়ার পর থেকে এক জনের ভাগে এখন ১০০ মালাও হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy