সঙ্কট চলছে, তা-ও অনেক দিন হয়ে গেল। নোট বাতিলের পর থেকেই কার্যত।
কখনও বেলডাঙায় মার খাচ্ছেন বৃদ্ধ দোকানি, তো কখনও রাস্তার উপরে খুচরো টাকা ছড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ভিখিরিরা। লক্ষ্মীর ভাঁড়ে পয়সা ফেলার উৎসাহও উবে গিয়েছে গিন্নিদের। রাস্তায় কৌটো নেড়ে চাঁদা তোলাও কমতির দিকে।
কারণ একটাই, ১, ২, ৫, ১০ টাকার কয়েন নিতে চাইছে না কেউ। এবং এই সব টাকা একেবারে তামাদি হয়ে যাবে কি না, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশ্বাস সত্ত্বেও সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না অনেকে। ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে হরিহরপাড়া ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, এই সব খুচরো টাকা সম্পূর্ণ বৈধ এবং তা বাতিল হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু তাতেও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি।
নবদ্বীপের রানিরঘাটে গঙ্গার ধারে রাধারানি মন্দিরের চাতাল ক’মাস আগেও ভিখিরিতে ভরে থাকত। এখন আছেন জনা পাঁচেক। তাঁদের এক জন গৌরীবালা মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিশ বছর ধরে এখানে ভিক্ষা করছি। এমন অবস্থা কখনও দেখিনি। আগে যে দোকানদারেরা খুচরোর জন্য আমাদের একশো টাকায় দশ-পনেরো টাকা পর্যন্ত বাটা দিত, তারাই এখন দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেয়। চায়ের দোকানে চা খেতেও পারছি না।”
এক কোণে জড়ো আটআনা পয়সা দেখিয়ে লক্ষ্মীরানি ভৌমিক, পূর্ণিমা হালদারেরা বলেন, “বাইরের লোক এ সব দেয়। আমরা ওখানে ফেলে দিই। রান্নার কাঠ, গুল, চাল-ডাল কিছুই খুচরো দিয়ে কিনতে পারি না। মন্দির থেকে যেটুকু প্রসাদ মেলে তাতে এক বেলা চলে যায়। রাতে উপোস।” বহু জায়গাতেই গেরস্থ বাড়িতে ভিক্ষা করতে গিয়ে ভিখিরিরা কাতর আর্জি জানাচ্ছেন, “মা টাকাপয়সা দিও না। একমুঠো চাল বা আলু দাও।”
বৃহস্পতিবার রাতে বেলডাঙার সরুলিয়া কলোনি এলাকায় খুচরো বিড়ি দিতে না চেয়ে মার খেয়েছেন বৃদ্ধ দোকানি সামসুল ইসলাম। তিনি এখনও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তবে শনিবার পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশও নিজে থেকে কাউকে ধরেনি।
এ দিনই হরিহরপাড়ার তরতিপুর স্কুলে সচেতনতা শিবির করে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘কেউ যদি খুচরো সংক্রান্ত সমস্যায় পরেন তবে আইন নিজে হাতে নেবেন না। ঘটনার কথা পুলিশকে জানাবেন। পুলিশ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাবে।’’
গত বুধবারই হরিহরপাড়া ব্লক প্রশাসনকে কয়েনের সমস্যা নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিল এসইউসি। শুক্রবার ও শনিবার নানা এলাকায় মাইকে প্রচার চালিয়েছে প্রশাসন। ওই ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতকে লিখিত ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। সর্বত্র প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজার এলাকায় মাইকে প্রচার হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কয়েন না নিয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। হরিহরপাড়ার যুগ্ম বিডিও উদয় পালিত বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসব আমরা। দরকারে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy