ফিরে-দেখা: গত বছর ১৪ মে কালনাঘাটে এ ভাবেই জ্বলেছিল নৌকা।
একটা বছর কেটে গেল প্রায়। কিন্তু ক্ষত এখনও তরতাজা। গত বছর ১৪ মে কালনাঘাটে নৌকা উল্টে গিয়ে ভাগীরথীতে ডুবে মৃত্যু হয় ২০ জনের।
সে সময় অভিযোগ উঠেছিল, অতিরিক্ত যাত্রী উঠে পড়াতেই এই বিপত্তি। কিন্তু এ শুধু কালনাঘাট নয়, যে কোনও খেয়াঘাটেই এক দৃশ্য। মানুষের সঙ্গে ভিড়ে ঠেসাঠেসি করে মোটরবাইক, সাইকেল, কখনও আবার চার চাকার গাড়ি। এমনকী গরুর গাড়ি নিয়ে নৌকায় উঠে পড়ারও নজির রয়েছে।
তাই যাত্রী নিরাপত্তা এবং নির্বিঘ্নে ফেরি চলাচলের কথা ভেবে সরকারি উদ্যোগে নবদ্বীপ, স্বরূপগঞ্জ এবং মায়াপুর— এই তিনটি ফেরিঘাটে বসানো হচ্ছে সিসিক্যামেরা। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ক্যামেরা বসানোর কাজ। বৃহস্পতিবার স্বরূপগঞ্জ ঘাটে চারটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। মায়াপুর এবং নবদ্বীপ ঘাটে ক্যামেরার সংখ্যা বেশি হবে। সব মিলিয়ে মোট আঠারোটি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
কিন্তু যে কালনাঘাট নিয়ে এত হইচই, এত প্রশ্ন উঠেছিল, তার পরিকাঠামো কিন্তু এখনও বেহাল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখনও শান্তিপুরের নৃসিংহপুরের দিকে জেটি তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ফলে বাঁশের তৈরি পাটাতনের উপর দিয়ে ভুটভুটিতে উঠতে হয়। তা ছাড়া নজরদারির তো অভাব রয়েইছে। প্রসঙ্গত, কালনাঘাট পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কালনা পুরসভা। এই ফেরিঘাটের দু’দিকের উন্নয়ন দ্বায়িত্বই তাদের।
কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ জানাচ্ছেন, গত বছরের দূর্ঘটনার পর ফেরিঘাটে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে দেওয়া হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘কালনার দিকে বছর তিনেক আগেই আমরা সিসিটিভি লাগিয়েছি। তবে শান্তিপুরের নৃসিংহপুরের দিকে ঘরের সমস্যার জন্য এখনও সিসিটিভি লাগানো হয়নি। তবে শীঘ্রই সেখানেও সিসিটিভি লাগানো হবে।” একই সাথে তাঁর দাবি, নৃসিংহপুরের দিকে জেটির কাজ প্রায় শেষের পথে। খুব শিগগিরি চালু হবে।
তুলনায় পরিকাঠামোগত ভাবে এক ধাপ এগিয়েই গিয়েছে গঙ্গার দু’পাড়ে মায়াপুর-নবদ্বীপ জোড়া পর্যটন কেন্দ্র। সারা বছর ধরে এখানে পর্যটকের আনাগোনা লেগেই থাকে। রথযাত্রা দিয়ে নবদ্বীপের পর্যটন মরশুম শুরু। তার পর পরপর ঝুলন, জন্মাষ্টমী, রাস, দোল... উৎসবের শেষ নেই। অন্য দিকে পুজোর সময় থেকে শুরু হয়ে যায় সাধারণ পর্যটকের আনাগোনা। বড়দিন, নববর্ষ, তেইশ বা ছাব্বিশে জানুয়ারির ছুটিতেও এক-এক বার লাখো মানুষ ভিড় জমান এখানে। এ হেন পর্যটক বহুল স্থানের অন্যতম প্রধান ভরসা জলপথ পরিবহণ।
নবদ্বীপে গঙ্গা এবং জলঙ্গি নদী দিয়ে মোট তিনটি রুটে ছ’টি জেটি দিয়ে ফেরি চলাচল করে। নবদ্বীপ ঘাটের দু’টি জেটি থেকে নবদ্বীপ-মায়াপুর এবং নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। অন্য দিকে মায়াপুরের হুলোর ঘাট থেকে জলঙ্গি নদীপথে মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা যায়। নবদ্বীপের খেয়াঘাট থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয় ভোর সাড়ে পাঁচটায়। নবদ্বীপ-মায়াপুর রুটে নৌকা চলে রাত দশটা পর্যন্ত। অন্যদিকে নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটে ফেরি চলাচলের সময়সীমা রাত এগারোটা পর্যন্ত। পর্যটক ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার নিত্যযাত্রী নবদ্বীপের দু’টি ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, কিংবা রাজমিস্ত্রি, মজুর সবাই আছেন।
সিসিক্যামেরা লাগানোর ফলে অনেক দিনের চাহিদা পূরণ হল। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সংস্থার সভাপতি গোপাল দাস জানান, এর ফলে নানা ধরনের সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাবেন বহিরাগত যাত্রী ও স্থানীয় মানুষেরা। পাশাপাশি আমাদেরও খুব সুবিধা হবে। তার কথায়, “বিশেষ করে উৎসবে নবদ্বীপ মায়াপুর ঘুরতে আসা মানুষের চুরি ছিনতাই এবং অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।”
এ ছাড়াও যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু লাইফ জ্যাকেটও। নবদ্বীপ থেকে স্বরূপগঞ্জঘাট ও মায়াপুরঘাট এই তিনটি ফেরিঘাটে কর্মরত রয়েছেন ১৬১ জন কর্মচারী। যাত্রীদের যাতে তাঁদেরকে চিনতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই কথা ভেবে প্রত্যেকের জন্য সরকার একই রকমের পোশাক বরাদ্দ করেছে, জানালেন নবদ্বীপ জলপথ পরিবহন সংস্থার সম্পাদক আলোক মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy