Advertisement
E-Paper

পুষ্পান্ন, পরমান্নে মহাপ্রভুর অন্নপ্রাশন

দোলের যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু মহাপ্রভুর আবির্ভাব উৎসব। ৫৩১ বছর আগে এক দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন নিমাই। দোলের সকাল থেকে নবদ্বীপ জুড়ে চলে তাঁর মহাভিষেকের প্রস্তুতি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০২:৫৮
মুখেভাত: নবদ্বীপের মহাপ্রভু বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

মুখেভাত: নবদ্বীপের মহাপ্রভু বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

দোলের যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু মহাপ্রভুর আবির্ভাব উৎসব। ৫৩১ বছর আগে এক দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন নিমাই। দোলের সকাল থেকে নবদ্বীপ জুড়ে চলে তাঁর মহাভিষেকের প্রস্তুতি। ফাল্গুন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠতেই মন্দিরে মন্দিরে শুরু হয় মহাপ্রভুর মহা অভিষেক পর্ব। উদ্‌যাপন চলে রাতভর।

পর দিন মধ্যাহ্নে গৌরাঙ্গদেবের অন্নপ্রাশন। মহাপ্রভু বাড়ির দক্ষিণদুয়ারি প্রকান্ড সিংহ দরজার উপরে নহবতখানা। দুপুরে সানাইয়ে ‘বৃন্দাবনী সারং’। নাটমন্দিরে উত্তরমুখী গরুড়স্তম্ভের নীচে ইংলিশব্যান্ডে পদাবলী কীর্তনের সুর। মূল মন্দিরের বন্ধ দরজার সামনে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষ সমস্বরে গাইছেন, “জয় শচীনন্দন জয় গৌরহরি, বিষ্ণুপ্রিয়া প্রাণনাথ নদিয়াবিহারী।” সুরের ত্রিধারায় ভেসে যাচ্ছে মন্দির প্রাঙ্গণ।

গর্ভমন্দিরের বন্ধ দরজার সামনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ হাজারও মানুষ। এই মন্দিরেই বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী সেবিত মহাপ্রভু বিগ্রহের সেবাপুজো হয়ে আসছে চৈতন্যদেবের প্রকটকাল থেকে। একমাত্র এই মন্দিরেই মহাপ্রভুর অন্নপ্রাশন উৎসব পালন করে থাকেন বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর উত্তরাধিকার বহন করে চলা সেবায়েত গোস্বামীরা।

তবে বহু প্রাচীন এই অন্নপ্রাশন উৎসবের শুরু ঠিক কবে থেকে, তা নিয়ে কোন পাথুরে প্রমাণ নেই। পুরুষানুক্রমে গোস্বামীরা এই উৎসব পালন করে আসছেন। তবে উৎসবে আড়ম্বরের ছোঁয়া লাগে একশো বছর আগে শচীনন্দন গোস্বামীর সময়ে। মহাপ্রভুর সেবায়েত গোস্বামীদের মতে অন্নপ্রাশনের দিন তিনি আর যুগাবতার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নন। তিনি ওই দিন জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর কোল আলো করা আদরের ধন নিমাই বা বিশ্বম্ভর। তাই অন্নপ্রাশনে ঝিনুক-বাটি থেকে ঝুমঝুমি, চুষিকাঠি থেকে খেলনা বাদ থাকে না কিছুই। চৈতন্যদেবের জীবৎকালেই বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী বংশীবদন ঠাকুরের সহায়তায় নবদ্বীপে নিজগৃহে নির্মাণ করিয়ে ছিলেন এই বিগ্রহ। অনিন্দ্যসুন্দর এই বিগ্রহকে এই এক দিনই পরানো হয় লাল চেলি। পায়ে সোনার মল।

সেবাইতদের তরফে সুদীন গোস্বামী জানান, শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর নন্দরাজ যে ভাবে উৎসব করে ছিলেন, নিমাই এর জন্মের পর জগন্নাথ মিশ্রও একই ভাবে উৎসব করেছিলেন। তাই এই অন্নপ্রাশন উৎসবের আর এক নাম “জগন্নাথ উৎসব”। গোস্বামীরা জানান, তাঁরা ছাড়া ভূ-ভারতে আর কেউ মহাপ্রভুকে অন্নপ্রাশন দেওয়ার অধিকারী নন। এ দিন সকাল থেকেই মহাপ্রভুর নামকরণ, চূড়াকরণ সবই হয়। তবে প্রতীকী ভাবে। দাদামশাই নাম রেখেছিলেন বিশ্বম্ভর। এ দিনও প্রতীকী নামকরণ করা হয়। তারপর ভোগ নিবেদন। এ দিন মহাপ্রভুকে অন্নব্যঞ্জন পরিবেশন করা হয় মহামূল্য পাত্রে। রূপো, তামা, কাঁসা এবং পেতল এই চার ধরনের পাত্রে সাজানো হয় পদগুলি। রূপোর থালা, বাটি, রেকাবিতে দেওয়া হয় অন্নব্যঞ্জন। হাত ধোয়ার গাড়ূ, পানের ডাবর সবই এ দিন রূপোর। সাদা পর্দা ঘেরা নাটমন্দিরের প্রশস্ত চত্বরে সাজানো ছাপ্পান্ন ভোগ। নামে ছাপ্পান্ন ভোগ হলেও অন্ন, পরমান্ন, পুষ্পান্ন, মিষ্টান্ন, তরকারি, ভাজা, পুরি, নিমকি, চাটনি সব মিলিয়ে পদের সংখ্যা কয়েকশো।

Rice ceremony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy