বারবার তাঁকে ফোন করে ডেকেছেন সদ্যোজাতের বাবা।
প্রতি বারই তিনি ফোন ধরে বলেছেন, ‘আসছি’।
শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিল শিশুটি। তখনই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। তাই তার বাবা বারবার ফোন করেছেন ‘নিশ্চয় যান’ চালককে।
প্রতি বারই তিনি বলেছেন, ‘আসছি’। কিন্তু আসেননি।
অপেক্ষা করতে-করতে বাড়িতেই মারা গিয়েছে শিশু। তাকে আর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি।
শিশুটির বাড়ি সমশেরগঞ্জ ব্লকের রামেশ্বরপুর গ্রামে। অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যার দূরত্ব বড় জোর ছ’কিলোমিটার। মঙ্গলবার বাড়িতেই কন্যাসন্তান প্রসব করেছিলেন মেরিনা বিবি। প্রসব নির্বিঘ্নে হলেও বুধবার থেকে শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
মেরিনার স্বামী জামিরুল শেখের অভিযোগ, শিশুটির অবস্থা জানিয়ে সকাল ৭টা নাগাদ অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিশ্চয় যান মালিক তথা চালক আলি হোসেনকে আসতে বলেন তিনি। সেই থেকে যত বার তাঁকে ফোন করা হয়েছে, তিনি প্রতি বারই বলেছেন— ‘আসছি’। এ ভাবে তিন ঘণ্টা কেটে যায়। বেলা ১০টা নাগাদ তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি জানাজানি হতেই
ক্ষোভ ছড়ায় গ্রামে। মৃতদেহটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর কথা ওঠে। শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি। কিন্তু দুপুরে জামিরুল গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের (বিএমওএইচ) কাছে ও সমশেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, নিশ্চয় যান মালিকের গাফিলতিতেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
বারবার ফোন পেয়েও শিশুটিকে আনতে না যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন আলি হোসেন। তবে তাঁর দাবি, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথা মতোই তিনি কাজ করেছেন। আলির কথায়. ‘‘শিশুটির অবস্থা যে এতটা খারাপ, তা আমায় বলা হয় নি। এর আগে সামান্য অসুখে ফোন পেয়ে বহু শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছি। তাদের ভর্তি নেওয়া হয়নি। সে কারণে নিশ্চয় যানের ভাড়াও দিতে রাজি হননি বিএমওএইচ।’’
এক ধাপ এগিয়ে আলি আরও দাবি করেন, ‘‘বিএমওএইচের নির্দেশ হল, যে কেউ ডাকলেই নিশ্চয় যানে আনা যাবে না। শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করার মতো অবস্থা না থাকলে ভাড়ার টাকা স্বাস্থ্য দফতর দেবে না। তাই আমি এ দিন শিশুটিকে আনতে ওই গ্রামে যাইনি।”
যা শুনে বিএমওএইচ গোলাপ হোসেন বলেন, “শিশুটি কতটা অসুস্থ সেটা তার বাব-মা বা নিশ্চয় যান চালকের বোঝার কথা নয়। ফোন পাওয়া মাত্র বাড়িতে গিয়ে তাকে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা নিশ্চয় যান চালকের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রেও সেটাই করা উচিত ছিল। ওই চালকের
বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগ এসেছে। পুরোদস্তুর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জঙ্গিপুরের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “শিশুটিকে কেন সময়ে প্রসবের
জন্য সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা গেল না, এটাও কিন্তু দেখা দরকার। তবে শিশু বাড়িতে বা হাসপাতালে যেখানেই জন্ম নিক, ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা খরচে সমস্ত চিকিৎসার সুবিধা পাবে সে। এটাই সরকারি নির্দেশ। সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাত্র ছ’কিলোমিটার দূরের গ্রামে শিশুটিকে আনতে গেল না নিশ্চয় যান? এই গাফিলতির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy