Advertisement
E-Paper

পুজো চালু রাখলেন মহিদুলেরা

তবে সব বছর না চাঁদা সমান ওঠে না। টাকার অভাবে মাঝে কয়েক বছর পুজো বন্ধও ছিল। এ বারও ফের পুজো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বেলা পড়ে এসেছে। দূর মাঠের পাড়ে সুয্যি টুপ করে ডুবতেই হ্যালোজেন বাতিটা জ্বেলে দিয়ে হাঁক পাড়েন মহিদুল ইসলাম দফাদার— “কী রে, বিল বইটা আন। এ বার তো বেরোতে হবে।” তাঁর ডাক শুনে পিল পিল করে এসে জোটে এক দল ছোকরা। তাঁদের নিয়ে মহিদুল রওনা দেন হাঁটরা বাজারে। তাঁর এখন নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। থাকবেই বা কী করে? গ্রামের পুজো কমিটির তিনিই যে সভাপতি। তিনি যে একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, সে কথা দিন কয়েকের জন্য ভুলে গিয়েছেন।

চাপড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম হাঁটরা। মুসলিমরাই গ্রামে সংখ্যায় বেশি। গ্রামের এক প্রান্তে জলঙ্গী নদীর চরে প্রায় আশি ঘর হিন্দুর বাস। তাঁরাই এত দিন ছোট করে পুজো করতেন। চেয়েচিন্তে যা চাঁদা উঠত, তাতেই কোনও মতে পুজো হত। কয়েক বছর ধরে বাজেট বাড়তে বাড়তে গত বছর বাজেট ৪০ হাজার ছুঁয়েছিল।

তবে সব বছর না চাঁদা সমান ওঠে না। টাকার অভাবে মাঝে কয়েক বছর পুজো বন্ধও ছিল। এ বারও ফের পুজো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। রণি ভক্ত বলেন, এ বার পুজোর বাজেট তৈরি করার সময়ই প্যান্ডেল, লাইট, প্রতিমা— সব শিল্পীরাই জানিয়ে দেন, খরচ বাড়বে। আলোচনার পরে ঠিক হয়, তা হলে এ বার পুজো বন্ধ থাক।

গ্রামে এ কথা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। প্রবল আপত্তি জানান মুসলিমরা। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, উৎসব মানে সবার। ফলে পুজোর দায়িত্ব তাঁরাও সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের মাঠে বসে আলোচনা সভা। সেই আলোচনায় বাজেট ৪০ হাজার থেকে এক লাফে বেড়ে হয় আড়াই লক্ষ। ইট ভাটার মালিক মহিদুল ইসলাম দফাদার জানিয়ে দেন, তিনিই দেবেন ষাট হাজার টাকা। পঞ্চায়েত সদস্য মফিদুল মণ্ডল জানান তিনি দেবেন ২০ হাজার টাকা।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তোলার দায়িত্ব তুলে নিলেন রনি ভক্ত, মলয় সরকার, দীলিপ দত্তদের পাশাপাশি নুর হুদা মণ্ডল, হুকুম আলি মণ্ডল, আব্বাস শেখরা।

পুজো কমিটির সম্পাদক রনি ভক্ত বলেন, “কোনও বাড়ি থেকে আমাদের খালি হাতে ফিরতে হয়নি।” গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বিবি বলেন, “ওই একই পুজোয় আমাদের সন্তানরাও তো আনন্দ করবে। পুজোটা না হলে গোটা গ্রামটাই যেন অন্ধকার হয়ে যেত।”

মন্ডপ বাঁধার শুরু থেকেই মাঠে পড়ে রয়েছেন হাকিম আলি, নুর শেখরা। বলছেন,“এই প্রথম গ্রামে বাটামের প্যান্ডেল হচ্ছে। বাড়ির মত দেখতে হবে। ভালো করে দেখে না নিলে শেষবেলায় চাপ হয়ে যাবে।” অসমাপ্ত মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে সুষমা সরকার, সাগরিকা মন্ডলরা বলেন, “তোমরা না থাকলে তো এ বার অঞ্জলিই দেওয়াই হত না। আর এ পুজো না হলে, সেই পাঁচ কিলোমিটার দূরে বড় আন্দুলিয়ায় ছুটতে হত।

Durga Puja Harmony Hindu-Muslim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy