রাজ্য সরকার যখন জন্ম থেকে মৃত্যুর পরিষেবা বিনি পয়সায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছে, ঠিক তখনই ফরাক্কায় অভিযোগ উঠেছে, এক পঞ্চায়েতে জন্মের শংসাপত্র নিতে গুনতে হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। তা আদায় করা হচ্ছে রসিদ দিয়েই। আর মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য পঞ্চায়েতের এক চিকিৎসককে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। বিজেপি নেতা অমর চক্রবর্তী ও সিপিএম নেতা হিমাংশু শেখর সাহার অভিযোগ, “বকলমে এটা কাটমানি। দু’বছর ধরে এ ভাবেই টাকা আদায় চলছে বেওয়া ১ পঞ্চায়েতে।”
ফরাক্কার বেওয়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পঞ্চমী দাস টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ওই এলাকারই জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য আঞ্জুমানারা খাতুন বলছেন, “এ ভাবে পরিষেবার নামে টাকা আদায় অন্যায়। আমি প্রশাসন ও দলকে জানাবো। ওই এলাকা ঝাড়খণ্ড লাগোয়া। বেশির ভাগই গরিব মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন মানুষকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত পরিষেবা দিতে হবে বিনা মূল্যে। তা হলে এ ভাবে পয়সা আদায় কেন?”
দু’দিন আগে বেওয়া ১ পঞ্চায়েতে যান আকতারা বিবি। তাঁর মেয়ে সাদিয়ারা খাতুনের জন্য জন্মের ডিজিটাল শংসাপত্র নিতে। তাঁর মেয়ের বয়স ১৮ বছর। জন্মের শংসাপত্র রয়েছে। কিন্তু তা ডিজিটাল করতে হবে। আকতারার অভিযোগ, “আমাকে বলা হয় এর জন্য দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। সে টাকা বহু কষ্টে জোগাড় করে জমা দিই। একটা রসিদও দেওয়া হয় পঞ্চায়েত থেকে।কিন্তু এত টাকা দিতে আমার মতো সকলেরই খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পঞ্চায়েত টাকা ছাড়া শংসাপত্র দিতে রাজি নয়।”
ফরাক্কা কলেজের এক অধ্যাপকের অভিযোগ, ‘‘আমার এক আত্মীয় বাড়িতেই মারা যান বার্ধক্যের কারণে। ওঁর ছেলে মৃত্যুর শংসাপত্র নিতে যান। সাধারণত এ ক্ষেত্রে বাড়িতে মৃত্যু হলে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য স্বাক্ষর করে দিলেই মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয় সব পঞ্চায়েতে। কিন্তু বেওয়া ১ পঞ্চায়েত এক হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি পঞ্চায়েতেরই নিযুক্ত। চিকিৎসক বিনা পয়সায় মানুষের চিকি়ৎসার জন্য। এই পঞ্চায়েতে তাই চিকিৎসকের স্বাক্ষর ছাড়া মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না। আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সই করার জন্য নিচ্ছেন ৫০০ টাকা।”
প্রধান পঞ্চমী দাস বলছেন, “জন্ম শংসাপত্র দিতে টাকা নেওয়ার জন্য বিগত পঞ্চায়েত একটি রেজুলেশন করছিলেন। সেটা মেনেই যত বছর পরে শংসাপত্র নেওয়া হবে প্রতি বছরের জন্য ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটা পঞ্চায়েতের নিজস্ব ফান্ড তৈরির জন্য। আর মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে সাধারণ মৃত্যুর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের স্বাক্ষর আর বাধ্যতামূলক রাখা হবে না।’’ পঞ্চমী বলেন, ‘‘এ নিয়ে এ সপ্তাহেই একটি সিদ্ধান্ত নেবে পঞ্চায়েত।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)