নিজস্ব চিত্র।
চোখের সামনে দিয়ে ট্রাক্টর বোঝাই হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিলের মাটি। অসহায়ের মতো তা দেখছেন এলাকার মৎসজীবীরা। সরকারকে মোটা টাকা লিজ় দিয়ে চাপড়ার এই বিলে মাছ চাষ করতে চেয়েছিল স্থানীয় মৎসজীবীদের সমবায় সমিতি। মাছও ছেড়েছিল। বিলের জলে বেড়ে ওঠা হাজার হাজার কুইন্টাল মাছ ‘লুট’ হয়ে গিয়েছিল।
অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতারা জড়িয়ে ছিলেন সেই ঘটনায়। তার পর থেকে ওই বিলে মাছ চাষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মৎস্যজীবীরা। তার পরিবর্তে চলছে বিলের মাটি কেটে মোটা টাকায় বিক্রি করা। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ, মাটি পাচারকারীদের মাথায় হাত রয়েছে রাজ্যের শাসক দলের একাংশের। পুলিশ-প্রশাসন তাই চোখবুজে আছে। আর তার পিছনে আছে মোটা টাকার লেনদেনের গল্প।
নদিয়া জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বিল হল চাপড়ার হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকশো বিঘার ‘সুঁটিয়ার বিল’। বেতবেড়িয়া থেকে মালিয়াপোতা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা সেই বিল কোথাও কোথাও প্রায় একশো মিটার পর্যন্ত চওড়া। এই বিলের প্রায় ৯০ একর জায়গায় মাছ চাষের জন্য লিজ় দেওয়া হয়েছিল। শেষ বার টেন্ডার হয় ২০১৯ সালে। লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে এই বিল লিজ় নিয়েছিল স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সমবায় সমিতি ‘হৃদয়পুর ইউনিয়ন ফিশারমেন্স কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’। এলাকার প্রায় ৮০ ঘর দরিদ্র মৎস্যজীবী এই সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত। এই বিলের মাছই তাদের বেঁচে থাকার এক মাত্র অবলম্বন।
২০২০ সালে ওই সমিতি ঋণ নিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মাছ ছেড়েছিল। অভিযোগ, মাছগুলি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হতেই স্থানীয় ‘লুটেরাদের’ নজরে পড়ে। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, গায়ের জোরে প্রায় সমস্ত মাছ তুলে নেন শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। দরিদ্র মৎস্যজীবীরা কোনও রকম প্রতিরোধই তৈরি করতে পারেননি। সমবায় সমিতিটির সম্পাদক চরণ হালদার বলছেন, “আমাদের পুরো সর্বস্বান্ত করে দেওয়া হয়। এখন এমন অবস্থা যে নতুন করে আমাদের আবার মাছ ছাড়ার ক্ষমতা নেই।” তাঁর আশঙ্কা, “মাছ ছাড়লেও ওরা আবার সমস্ত মাছ ধরে নিয়ে যাবে। আমরা কিছুই করতে পারব না।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল নেতাদের হাত আছে ওদের মাথার উপর। সেই সময়ে প্রশাসনও কিছু করেনি।”
মাছ চাষ বন্ধ হওয়ার পর ফাঁকা বিলের জমির ‘অধিকার’ নিয়েছেন সেই প্রভাবশালীরা। শুরু হয়েছে যথেচ্ছ মাটি কেটে মোটা টাকায় বিক্রি করা। এই অসময়েও মাটি কেটে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে স্থানীয় এক শ্রেণির মাটি মাফিয়ারা। সমবায়ের সদস্য তথা মৎস্যজীবী জয়দেব হালদার বলছেন, “প্রথমে ওরা সমস্ত মাছ তুলে নিল। এখন এমন ভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে যে এর পর আমরা চাইলেও আর মাছ চাষ করতে পারব না। আমাদের সব দিক দিয়ে মারতে চাইছে।”
সকাল থেকে যন্ত্র ন্দিয়ে মাটি কাটা চলছে। সেই মাটি ট্রাক্টর বোঝাই হয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ইটভাটার মালিকরা ছাড়াও শহরাঞ্চলে বাড়ির ভিত তৈরির জন্য মোটা টাকায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেই মাটি। স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিচ্ছেন না কেন? প্রশাসনকেই বা জানাচ্ছেন না কেন? স্থানীয় বাসিন্দা শুভঙ্কর সর্দারের আশঙ্কা, “বাধা দিলে রক্তারক্তি হয়ে যাবে। ওরা কাউকে মানে না।”
কারা কাটছে মাটি?
স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজু, তাপস, মিঠুন, মিলনদের মতো এক শ্রেণির মাটি কারবারি অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও মাস দেড়েকের মধ্যে চাপড়া থানার পুলিশ বেশ কিছু ট্রাক্টর ও মাটি কাটার যন্ত্র আটক করেছে। কিন্তু এদের ট্রাক্টর ও মাটি কাটার যন্ত্রে হাত পড়েনি। এর পিছনেও আছে আলাদা গল্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy