প্রতীকী ছবি।
বগুলায় বৃদ্ধা খুনের দু’দিন পরেও দুষ্কৃতীদের ধরতে পারল না পুলিশ। খুনের কারণ নিয়েও কাটছে না ধন্দ। তদন্তে নেমে পুলিশের সামনে উঠে আসছে বেশ কিছু প্রশ্ন। আপাতত সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা মনে করছেন, এই ঘটনার সঙ্গে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ জড়িত থাকতে পারেন। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “তদন্তে একাধিক বিষয় উঠে আসছে। আমরা সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অসীমাদেবী জানিয়েছেন বীণাপাণি রাতে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে ঘুমোতেন। তাহলে কী ভাবে খোলা হল তাঁর ঘরে দরজা? তা হলে কি তিনি বুধবার রাতে দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ ঘটনার দিনই এমন ব্যতিক্রম ঘটল কেন? বৃদ্ধার ঘরের আলমারি খোলা ছিল। পরিবারের সদস্যেরা মনে করছেন, দুষ্কৃতীরা আলমারি খুলে লুঠ করার সময় ওই বৃদ্ধা বাধা দিয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ এক প্রকার নিশ্চিত যে, এমনটা হয়নি।
খুনের তদন্তকারীদের দাবি, ঘুমন্ত অবস্থাতেই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়। কারণ চাদরটা তাঁর শরীরে একই রকম ভাবে ছিল। জেগে গিয়ে বাধা দিলে তিনি উঠে বসতেন বা চেষ্টা করতেন। তাতে গায়ের চাদর এলোমেলো হয়ে যাওয়ার কথা। মাথাটাও বালিশের উপরে ঠিকঠাক ভাবেই ছিল। তা ছাড়া দরজা ভেজানো থাকলেও সেই দরজা খুলতে গেলে বিকট শব্দ হয়। কেন সেই শব্দে ঘুম ভাঙল না বীণাপাণির। বিশেষ করে এই বয়সের মানুষের সাধারণত হালকা ঘুম হয়।
বৃদ্ধার পরিবারের দাবি, ছাদের দরজার তালা ভেঙে লুঠ করতে ভিতরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু সেখানেও নানা অসঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে সে ক্ষেত্রে প্রথমে পড়বে বীণাপাণির বৌমা অসীমার ঘর। সেই ঘরেও আলমারি আছে। সেখানেও টাকা ও গয়না থাকার সম্ভাবনা আছে। কেন সেই ঘরে না ঢুকে দুষ্কৃতীরা বীণাপাণির ঘরে ঢুকল?
প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কী ভাবে বাড়ির ভিতরে ঢুকল দুষ্কৃতীরা? বৃদ্ধার পরিবারের লোকেদের দাবি, ছাদের দরজার তালা ভেঙে সিঁড়ি বেয়ে ভিতরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। ফিরেও গিয়েছে সে ভাবেই। পুলিশের দাবি, সেখানেও রয়েছে অসঙ্গতি। বৃষ্টির কারণে উঠোনের মাটি নরম হয়ে থাকলেও তেমন কোনও সন্দেহজনক পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি। তালা ভিতর দিক দিয়ে শিকলে লাগানো ছিল। বাইরে থেকে ভাঙা বেশ কঠিন। সেটা করতে পারলেও জোরে শব্দ হওয়ার কথা। দ্বিতীয়ত, সে ক্ষেত্রে শিকলের আংটা বেঁকে যাওয়ার কথা। কিন্ত শিকল বা আংটায় তেমন কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, তালাটা যে লোহার শাবল দিয়ে ভাঙা হয়েছে সেটাও বীণাপাণির বাড়ির। সেটা ছিল রান্নাঘরে। তা হলে সেটা দুষ্কৃতীদের হাতে গেল কী ভাবে?
পুলিশ জানিয়েছে, একতলা বাড়ির চার পাশে বেশ কিছু সুপুরি গাছ আছে। সেই গাছের থেকে ছাদের দূরত্ব তিন থেকে চার হাত। ফলে পেশাদার কেউ না হলে সেই গাছ থেকে লাফিয়ে ছাদে নামা কঠিন। আর আছে একটা বেল গাছ। সেই গাছ বেয়ে উপরে ওঠাও এক প্রকার অসম্ভব। আবার ছাদেও তেমন কোন পায়ের ছাপ বা অন্য কোন চিহ্নও প্রাথমিক ভাবে পাওয়া যায়নি বলেই তদন্তকারীদের দাবি। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “কোন পথ দিয়ে দুষ্কৃতীরা বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিল, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তার উত্তর পাওয়া গেলেই খুনের জট অনেকটাই খুলে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy