করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দিন সাতেক আগে কার্যত লকডাউনের মতো কড়া বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। জেলার পুর এলাকাগুলি বাদে অধিকাংশ জায়গায় সংক্রমণ গত এক সপ্তাহে কমেছে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করছেন। তাঁদের দাবি, জেলায় বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দু’হাজার জনের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। তার মধ্যে গড়ে তিনশো থেকে চারশো জনের নমুনা পজ়িটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
অথচ সূত্রের খবর, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোট নমুনা পরীক্ষার ১১.১২ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণ ধরা পড়ছিল। স্বাস্থ্যভবনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সংক্রমণের বর্তমান হার ৯.১৮ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ জেলায় করোনায় মারা গিয়েছেন ৩৫ জন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, উত্তর মুর্শিদাবাদের গ্রামীণ এলাকায় গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ সবচেয়ে কমেছে। সুতি ১, সুতি ২, শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের মতো খড়গ্রাম, নবগ্রামেও সংক্রমণের রেখচিত্র আপাতত নিম্নমুখী। এই এলাকাগুলিতে সংক্রমণের হার প্রথম থেকেই বেশি ছিল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, সংক্রমণ রেখচিত্র শীর্ষে যাওয়ার জন্য বর্তমানে ওই সব জায়গায় তা কমছে। জেলায় সংক্রমণের হার এক সময় ৩০ শতাংশে পৌঁছে গেলেও চলতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার ১৬ শতাংশ হয়েছে বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা বাড়াই সংক্রমণের হার কমার কারণ বলে দাবি করছেন তাঁরা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, “সপ্তাহখানেক আগেও ভিড় করে মানুষ ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁদের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করতেন না। এখন অবশ্য মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছেন। বিধিনিষেধ কড়াকড়ি হওয়ায় রোগও কম ছড়াচ্ছে।” তবে চিকিৎসকদের একটি অংশ অবশ্য করোনার পরীক্ষা কম হওয়াকেই সংক্রমণের হার কমার কারণ বলে মনে করছেন। চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “আইএমএ-র হেল্পলাইনে যাঁরা ফোন করছেন তাঁদের কোভিডের লক্ষণ থাকা সত্বেও তাঁরা করোনার পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। উপরন্তু, তাঁরা স্টেরয়েড জাতীয় এবং প্রচলিত নানা জ্বরের ওষুধ খেয়ে নিচ্ছেন।’’ ফলে উপসর্গ থাকলেও অসচেতন একদল মানুষ ‘ধরাছোঁয়া’র বাইরেই থাকছেন। যে কারণে ভবিষ্যতে সংক্রমণ হার বাড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ওই চিকিৎসক। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেলডাঙা ছাড়া জেলার বাকি পুরসভা এলাকায় এখনও সংক্রমণ তেমন কমেনি। গ্রামীণ এলাকায় তুলনামুলক সংক্রমণ কম হলেও সেখানকার বাসিন্দারা পরীক্ষা করাচ্ছেন না বলেই এমন ছবি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। তাঁদের আরও অভিযোগ, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন জেলায় গড়ে পরীক্ষার সংখ্যা তিনশো থেকে আটশোর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে।
অন্যদিকে, জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা বাসিন্দাদের সচেতনতা ফেরার দাবি করলেও সেই দাবির বিপরীত ছবিই রবিবার সকালে দেখা গিয়েছে বহরমপুরের নতুন বাজারে। এদিন সেখানে মূলত ফল ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তবে সেই বাজারে ভিড়ে কারও মুখেই ছিল না মাস্ক। দূরত্ববিধিও শিকেয় ওঠে। এক সময় অবস্থা এমনই হয়, বাজার ভিড় নেমে আসে রাস্তায়। সেই ছবি আতঙ্কা বাড়িয়েছে জেলাবাসীরও।