Advertisement
E-Paper

ঠিক চিকিৎসা শুরুতে দেরিই ডাকছে বিপদ

শয্যা না পাওয়ায় বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর যুক্তি ধোপে টিকছে না বলেই কর্তাদের দাবি।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২১ ০৫:২৮
করোনায় বন্ধ ট্রেন। বাসই ভরসা। রবিবার কৃষ্ণনগরে।

করোনায় বন্ধ ট্রেন। বাসই ভরসা। রবিবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।

নদিয়ায় দৈনিক সংক্রমণ হাজার ছুঁই-ছুঁই। প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ভয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এত মৃত্যুর পিছনে অন্যতম কারণ রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে গাফিলতি ও বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করার প্রবণতা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক দেরি করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে, যখন আর বিশেষ কিছুই করার থাকছে না।

স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, করোনা রোখার জন্য টিকা দেওয়া বা পরিকাঠামো গড়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ করা। চিকিৎসকেরা বলছেন, আক্রান্ত বা তাঁদের পরিবাবের ভুল পদক্ষেপের কারণে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। প্রথমে লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরও দু’তিন দিন অনেকে চুপটি করে বসে থাকছেন। নিজেই বোঝার চেষ্টা করছেন, কী কারণে জ্বর বা সর্দিকাশি হচ্ছে। তার পর জ্বর না ছাড়লে যাচ্ছেন পরীক্ষা করাতে। রিপোর্ট আসতে আরও তিন-চার দিন। তার পরে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও রোগীকে শুধু অক্সিজেন দিয়ে বাড়িতে রেখে দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তখন আর কিছুই করার থাকছে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসার আগেই মারা যাচ্ছেন ওই রোগী।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক বিনোদ দাস বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেরিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার উপর রিপোর্ট পাওয়ার পরেও বাড়িতে ফেলে রেখে নিজেদের মত করে রোগীর চিকিৎসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” তাঁর মতে, “করোনার উপসর্গ যদি সামান্যও প্রকাশ পায় তা হলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করাতে হবে। এক দিনও ফেলে রাখা চলবে না। কারণ করোনার চিকিৎসার জন্য একটা ঘণ্টাও অত্যন্ত মূল্যবান। দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। না হলে কিন্তু এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।”

একই কথা বলছেন আর এক মেডিসিনের চিকিৎসক আমোদ প্রসাদ। তিনি বলেন, “এই অতিমারি পরিস্থিতিতে সামান্যতম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। একটু উপসর্গ দেখা গেলেই লালারস পরীক্ষা করান। আর রিপোর্টের জন্য বসে থাকবেন না। রিপোর্ট আসার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সেই মত চিকিৎসাও শুরু করে দিতে হবে। না হলে অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে।” সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অক্সিজেন অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। বাড়িতে তা মজুত করে রেখে আমরা কেউ-কেউ এক দিকে যেমন অন্যদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছি, তেমনই বেশি মাত্রায় অক্সিজেন দিয়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ করে দিচ্ছি।”

অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে সরকারি কোভিড হাসাপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই। সেই কারণে তাঁরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন না, বাড়িতে রেখেই অক্সিজেন দিয়ে চেষ্টা করেছেন। জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, এই প্রচার একেবারেই ঠিক নয়।

এখনও পর্যন্ত সরকারি কোভিড হাসপাতালে শয্যা খালি আছে। তাঁদের সন্দেহ, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে অনীহা থেকেই অনেকে এমন প্রচার করছেন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত নদিয়া জেলায় ৪০৫টি কোভিড শয্যার মধ্যে ৩৮৮তে রোগী ভর্তি ছিলেন। ফলে শয্যা না পাওয়ায় বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর যুক্তি ধোপে টিকছে না বলেই কর্তাদের দাবি।

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy