Advertisement
E-Paper

‘সারি’ থেকে দেহ এলেই টানাপড়েন

তাঁদের অসম্মতির কারণ ছিল, ভাইরাস-ভয়। ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেটে ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর’-এর পাশাপাশি লেখা ছিল, কোভিড রিপোর্টের ফলাফলের অপেক্ষা করা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৯
তখনও মৃতদেহের অপেক্ষায়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

তখনও মৃতদেহের অপেক্ষায়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

মৃতদেহ এসেছিল কৃষ্ণনগর গ্লোকাল হাসপাতাল থেকে। আপাতত সেটি ‘সারি’ হাসপাতাল। অর্থাৎ যেখানে ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (সংক্ষেপে ‘সারি’) যুক্ত রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগেরই কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয়েছিল ধুবুলিয়ার বাসিন্দা বছর ষাটেকের বৃদ্ধের। গভীর রাতে মৃতদেহ নবদ্বীপ শ্মশানে নিয়ে গেলে দাহ করতে বেঁকে বসেন শ্মশানের কর্মীরা।

তাঁদের অসম্মতির কারণ ছিল, ভাইরাস-ভয়। ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেটে ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর’-এর পাশাপাশি লেখা ছিল, কোভিড রিপোর্টের ফলাফলের অপেক্ষা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মৃত্যুর কারণ কিনা তা নিশ্চিত বলা যাবে সেই রিপোর্ট আসার পরে। তাতেই আলোড়ন পড়ে যায় শ্মশান-কর্মীদের মধ্যে। তাঁরা জানিয়ে দেন, নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ মৃতদেহ ছোঁবেন না। অগত্যা মৃতদেহ ফিরে যায় গ্লোকালে। শেষ পর্যন্ত নদিয়ার সদর মহকুমাশাসক নিজে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা-র সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজে মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে আসেন। সঙ্গে পুলিশও ছিল। সেখানে কাঠের চিতায় মৃতদেহ দাহ করা হয়।

পরে অবশ্য ওই বৃদ্ধের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। শনিবার সকালে ওই হাসপাতালে ভর্তি ধুবুলিয়ার আরও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তাঁরও করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। তাঁর মৃতদেহও নবদ্বীপ শ্মশানে কাঠের চিতায় দাহ করা হয়।

গ্লোকাল হাসপাতাল সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার আগে হাসপাতালের ডোমেরাও প্রথমে কেউ সঙ্গে যেতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত এককালীন ১০ হাজার টাকা ও মৃতদেহপিছু আরও ১ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানানোর পরে দু’জন রাজি হন। তাঁদের পিপিই দেওয়া হয়। নবদ্বীপ শ্মশানে এক বার ঘুরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বার যখন দেহ আনা হয় তখনও সেখানকার কোনও ডোম মৃতদেহ ছুঁতে রাজি হননি বলে অভিযোগ। ওই শ্মশানের ইলেকট্রিক চুল্লির উচ্চতা অনেক বেশি ছিল। হাসপাতালের দু’জন ডোমের পক্ষে মৃতদেহ স্ট্রেচারে করে সেখানে তোলা অসম্ভব ছিল। তখন কাঠের চিতায় পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভোর তিনটেয় দাহ শেষ হয়।

শনিবার সকালে এ ব্যাপারে সর্বদলীয় বৈঠক হয় এবং তাতে ঠিক হয়, ‘সারি’ হাসপাতাল থেকে কোনও দেহ এলে নবদ্বীপ শ্মশানের দ্বিতীয় একটি গেট দিয়ে ঢোকানো হবে এবং নির্দিষ্ট একটি জায়গায় কাঠের চিতায় পোড়ানো হবে। শনিবার আরও এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর সেই নিয়মেই মৃতদেহ দাহ হয়। তবে শ্মশান এলাকায় এই বিষয়টি নিয়ে এখনও বেশ কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে। আশপাশের মানুষ এখনও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।

কৃষ্ণনগর থেকে শুক্রবার রাতে যে শববাহী গাড়িতে মৃতদেহ আনা হয়েছিল তাঁর চালকের দাবি, ‘‘তাঁর পাড়ার লোক জানিয়ে দেন, তাঁকে চোদ্দোদিন ঘরবন্দি থাকতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কাজে ফাঁকি দিইনি, আর এলাকার মানুষের কথাও অমান্য করব না।”

নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা এ দিন বলেন, “নবদ্বীপ শ্মশানে সাধারণ দেহ সৎকার স্থান থেকে একটু দূরে আলাদা একটি জায়গায় ওই দেহগুলির সৎকার হবে।” তবে নবদ্বীপ নাগরিক কমিটি এবং সিপিএমের নবদ্বীপ এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে পুরসভার কাছে লিখিত ভাবে গ্লোকাল থেকে আসা মৃতদেহ দাহ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

এ দিকে, সারি হাসপাতাল থেকে গত শুক্রবার পালিয়ে যাওয়া বৃদ্ধকে এ দিন ফিরিয়ে আনা হল হাসপাতালে। শুক্রবার সকালে কৃষ্ণনগর গ্লোকাল হসপিটাল থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন কালীগঞ্জের চড়বেগিয়া গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ। বিষয়টা জানাজানি হওয়ার পর রাতেই কালীগঞ্জ থানার পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁর বাড়ি যান। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। বৃদ্ধের ছোট ছেলের দাবি, অক্সিজেন পাচ্ছিলেন না তাঁর বাবা। কোনও চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছিল না। তাই তাঁরা তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy