নেই ক্রেতা। নিজস্ব চিত্র
ঢাক বাজিয়ে, আদিবাসী নৃত্যের তালে শুক্রবার মেলায় উদ্বোধনের দিন তবু ভিড় ছিল হাজার খানেকের। রঘুনাথগঞ্জ ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়ামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রুজির সংস্থান করে দিতেই যে সাতদিনের ‘সবলা’ মেলার আয়োজন, রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পান্ডে মেলার উদ্বোধন করে সে কথা জানিয়েছিলেন। হাজির ছিলেন জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের একাধিক কর্তাও।
কিন্তু শনি ও রবিবার ছুটির দিনেও প্রায় জনহীন সবলা মেলার সে প্রাঙ্গণ। শনিবার যদিও বা গোটা পঞ্চাশেক দর্শনার্থীর দেখা মিলেছিল রবিবার তা উধাও। ৩৯টি স্টলে সাগরদিঘি, ফরাক্কা, মোড়গ্রাম, বহরমপুর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা কেউ বসেছিলেন কাঁথা স্টিচে সাজানো সম্ভার নিয়ে, কেউ বা কাঁসার তৈরি চুড়ে, বাউটি-সহ নানা অলঙ্কার নিয়ে। কেউ বা স্টল সাজিয়েছিলেন পাটের তৈরি ব্যাগ, পুতুল দিয়ে।
প্রথম দিন দু’চারশো টাকার বেচাকেনা হলেও শনি, রবিবার ছুটির দিনে অনেকেরই ‘বউনি’ পর্যন্ত হয়নি। হতাশ হয়ে স্টল ফেলে অনেক গোষ্ঠীই পাততাড়ি গুটিয়েছেন মেলা থেকে।
বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে কাঁথা স্টিচের কাজ নিয়ে সবলা মেলায় এসেছেন সৃষ্টি গোষ্ঠীর পারমিতা রায়। প্রথম দিন শো আটেক টাকার বিক্রিও হয়েছে। তিনি বলছেন, “ছুটির দিনে মেলায় লোকই তো নেই।’’
মোড়গ্রামের স্বস্তিকা গোষ্ঠী কাঁসার অলঙ্কার তৈরির কাজ করে। গোষ্ঠীর শেফালি ঘোষ বলছেন, “প্রথম দিন উদ্বোধন দেখতে কিছু লোক এসেছিলেন। সরকারি অফিসাররা ও মন্ত্রী ছিলেন। সে দিনও মাত্র ৭০০ টাকার বিক্রি হয়েছে। পরের দু’দিন প্রায় ফাঁকাই। শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়লে হবে না। বাজার না পেলে তৈরি জিনিসপত্র বেচব কী ভাবে? স্বনির্ভর হব কী ভাবে?”
পাটের তৈরি পুতুল, ব্যাগ ইত্যাদির স্টল দিয়েছেন মহিলা শিল্পী সমন্বয় গোষ্ঠী। প্রথম দিন ৩২০০ টাকার বিক্রিও হয়েছে। নমিতা হাজরা বলছেন, “যাওয়া আসাই সার। সরকারি তরফে খাওয়া দাওয়ার খরচ মিলছে। তাই আসছি। কিন্তু ক্রেতার দেখা মিলছে কই? সাতদিন মেলা চলবে কী ভাবে জানি না।”
সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা অন্বেষা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী শাড়ির উপর এমব্রয়ডারি কাঁথা স্টিচ করে। প্রথম দিন সাড়ে তিন হাজার টাকার বিক্রি হয়েছিল। ইলারানি সরকার বলছেন, “বিভিন্ন মেলায় গিয়েছি। বাড়িতেও কিছু খদ্দের পাই। প্রথম দিনের ভিড় দেখে ভাল লেগেছিল। কিন্তু গত দু’দিনে লোকেরই তো দেখা নেই। কিনবে কে? তবে রাত ৮টার পর বাড়ি যেতে ব্লক অফিসের গাড়ি পাচ্ছি , তাই আসছি।”
ফরাক্কার আনন্দময়ী স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী এনেছে পুতি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী। প্রথম দিনও মাত্র ৩৫০টাকা মতো বিক্রি হয়েছিল। বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী দেবী রজক বলছেন, “কিন্তু মেলা শেষ হয় অনেক রাতে। ট্রেনে ফেরা বড় সমস্যা। তাও আসতাম যদি বিক্রিটা হত। লোক না এলে বেচব কাকে?”
সরকারি সবলা মেলায় ভিড় নেই বা ক্রেতা না পাওয়ার সমস্যা মানছেন জেলায় এই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রদীপ বিশ্বাস। তবে তাঁর কথায়, “সবলা মেলায় কতটা বিক্রি হল বা কত ক্রেতা এল সেটা দিয়ে মেলার সাফল্যের মাপকাঠি নয়। এই সব সরকারি মেলার আয়োজন করা হয় শুধুওমাত্র স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত সামগ্রীকে তুলে ধরার জন্য। দিল্লি-সহ রাজ্যের বাইরের বহু মেলায় পাঠানো হয় তাঁদের। এই সব মেলায় বহু মহাজন আসেন। তারা এসব সামগ্রী দেখে উৎসাহিত হন। সেই মতো স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি তাদের মালপত্র বাইরে বিক্রির সুযোগ পায়।’’ তাঁর দাবি, অনেক সময় মহাজনেরা তাদের পছন্দের ইচ্ছে জানান। সেই মত সামগ্রী তৈরি করে বৃহৎ বাজারে তা পাঠানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy