Advertisement
E-Paper

সুফি-কত্থকে অতীত সজীব মোতিঝিলে

আকাশের রাখি পূর্ণিমার চাঁদ। নীচে উর্দু শায়েরি, সুফি গানের সুরে কত্থক নৃত্য। ইতিহাস যেন ফের প্রাণ ফিরে পেল লালবাগের মোতিঝিলে। যার সাক্ষী রইলেন কয়েকশো দর্শক।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৩
লালবাগের মতিঝিলে চলছে অনুষ্ঠান। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

লালবাগের মতিঝিলে চলছে অনুষ্ঠান। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

আকাশের রাখি পূর্ণিমার চাঁদ। নীচে উর্দু শায়েরি, সুফি গানের সুরে কত্থক নৃত্য। ইতিহাস যেন ফের প্রাণ ফিরে পেল লালবাগের মোতিঝিলে। যার সাক্ষী রইলেন কয়েকশো দর্শক। নবাবি আমলে দোলের দিনে নাচগানে যেখানে জমে উঠত মহফিল, সেই মোতিঝিলের প্রাসাদ আজ নেই। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক স্থানে গড়ে ওঠা ‘প্রকৃতিতীর্থ’ পর্যটনকেন্দ্রে মুর্শিদাবাদের সংস্কৃতিচর্চাকে ফের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

গত ২৯ অগস্ট লালবাগের মোতিঝিলে নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, প্রতি শনি ও রবিবার, এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলিতে মোতিঝিল কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আলকাপ, বোলান গানের মতো জেলার লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতিকেও তুলে ধরা হবে। জেলার শিল্পীদের অনুষ্ঠানের সুযোগ দেওয়া হবে।

শনিবারের সান্ধ্যকালীন ওই নৃত্যানুষ্ঠানে পদ্মবিভূষণ পণ্ডিত বিরজু মহারাজের শিষ্যা পারমিতা মৈত্র ও তাঁর নৃত্যসংস্থা ‘নৃত্যাঙ্গন কত্থক কেন্দ্রের’ মোট চল্লিশ জন শিক্ষার্থী ও শিল্পী যোগ দেন। প্রায় ঘণ্টাখানেকের ওই অনুষ্ঠানের শুরুতেই পণ্ডিত বিরজু মহারাজের নৃত্য পরিকল্পনায় ও তাঁর গাওয়া গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় ‘মধুরাষ্টকম্’। যেখানে মাখনচোর থেকে কালিয়াদমনকারী, কৃষ্ণের বিভিন্ন রূপ তুলে ধরা হয়। এরপরে ভজন গানের সঙ্গে কত্থক শৈলীতে চামর-মঞ্জিরা ও ডাফলি ব্যবহার করে রাধাকৃষ্ণের পুজোর রূপ পরিবেশন করা হয়। পরে বহরমপুর ও কলকাতার চার শিল্পী রেশমি মিত্র, বর্ণালী সাহা, মণিদীপা পাল ও প্রিয়াঙ্কা ধাড়া ধামার তালে কত্থকের শুদ্ধ নৃত্য পরিবেশন করেন।

সঙ্গীত গবেষক রমাপ্রসাদ ভাস্কর জানান, নবাবি আমলে ভোগবিলাসের জন্য মুর্শিদাবাদ শহর থেকে দূরে নিভৃতে মোতিঝিলের প্রাসাদ তৈরি করা হয়। তখনকার নাচগান, আমোদপ্রমোদের কথা মেলে ‘রিয়াজ-উস-সালাতিন’ এবং ‘মুতাক্ষরিণ’ নামে দু’খানি বইয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, দোল উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাজার নর্তকীর সমবেত নৃত্য হ’ত। স্তূপ করে রাখা থাকত আবির। গান-বাজনা, নাচ, শায়েরিতে জমে উঠত উৎসব। আলোর রোশনাইয়ে পাখিরা সকাল হয়ে গিয়েছে মনে করে ডাকতে শুরু করত , তা-ও বলা হয়েছে বইদুটিতে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে নবাবি আমলের আমেজ তৈরি করার দিকে মনোযোগী ছিলেন শিল্পী পারমিতা মৈত্রও। নবাবের দরবারে যে ভাবে মেহফিল সাজানো হত, সেই ভাবনা থেকে ‘মেহফিল ইঁয়াদে’ শিরোনামে উর্দু শায়েরির সঙ্গে কত্থকের বিলম্বিত লয়ে পরিবেশিত হয় নৃত্য। এতে যোগ দেন ছয় শিল্পী।

১৭৫০-৫১ সালে আলিবর্দি খাঁর জামাতা, তথা ঘসেটি বেগমের স্বামী নবাব মহম্মদ মওয়াজেস খাঁ সুদৃশ্য মোতিঝিল এবং ঝিলের পাড়ে ‘সাংহী দালান’ নামে এক বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করেন। বর্তমানে ওই প্রাসাদ বিলুপ্ত। রয়ে গিয়েছে দালানের ভিত্তিপ্রস্তর। ওই প্রাসাদ এলাকার ৪৬ একর জমি নিয়ে রাজ্য পর্যটন দফতর এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

লালবাগ পর্যটন সহায়তা কেন্দ্রের স্বপন ভট্টাচার্য জানালেন, পর্যটন মরসুমে কয়েক লক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পরে এখানে কোনও মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা ছিল না। ‘‘এত দিনে মোতিঝিলের খোলা মঞ্চ পর্যটকদের ইচ্ছেপূরণ করল,’’ বলেন তিনি।

Cultural program Motijheel Lalbag Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy