এমনটা তো প্রায়ই হয়। এবং হচ্ছেও।
সাতসকালে ফোন এল, ‘ব্যাঙ্ক থেকে ম্যানেজার বলছি। আপনার এটিএম কার্ডের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। রিনিউ করতে হলে সেই কার্ডের নম্বর ও পিন নম্বর দিন।’
এ ভাবেই গত সপ্তাহে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসেছিল বহরমপুরের খাগড়ার এক মহিলার কাছে। তিনিও সবটা সত্যি ভেবে ফোনেই সেই ‘ম্যানেজার’কে এটিএমের কার্ড নম্বর ও পিন নম্বর দিয়ে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই মহিলার মোবাইলে এসএমএস আসে। সেখানে দেখা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে।
এর পরে তিনি বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু এখনও সেই ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি।
মাস ছয়েক আগে বহরমপুরের এক ব্যক্তির ছবি নিয়ে অন্য এক জন ফেসবুকে আপত্তিকর লেখা ও ছবি ছেড়ে দিয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি বহরমপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পরে বহরমপুর থানার পুলিশ সিআইডির সাহায্য নিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল।
ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর ছবি দেওয়া বা আপত্তিকর এসএমএস পাঠানোকে কেন্দ্র করে বহরমপুর থানায় অন্ততপক্ষে ৮টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেগুলিতেও সিআইডির সাহায্য নিতে হয়েছিল।
এটিএমের প্রতারণার ঘটনায় প্রতি মাসে একটি, দু’টি করে মামলা হচ্ছেই। এই ধরনের ‘সাইবার ক্রাইমে’র জন্য এত দিন জেলায় আলাদা থানা ছিলনা। সাধারণ থানাতে গিয়ে অভিযোগ জানাতে হত। কিন্তু সাধারণ থানাগুলিতে ‘সাইবার ক্রাইমের’ জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় তদন্তে এগোতে গিয়ে পুলিশকে হোঁচট খেতে হত। সিআইডির সাহায্য নিয়ে তদন্তে এগোতে হত। এ বারে সেই সমস্যা দূর করতে জেলায় সাইবার থানা হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘রাজ্য থেকে সাইবার থানার অনুমোদন দিয়েছে। সেই জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও এসে গিয়েছে। পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণের কাজও চলছে। রাজ্য থেকে দিনক্ষণ জানালেই সাইবার থানা চালু করা হবে।’’
পুলিশ জানাচ্ছে, এখন অপরাধের ধরন পাল্টেছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নানা ধরণের অপরাধ ঘটে চলেছে। কিন্তু সেই সব অপরাধ দমনে কলকাতায় সাইবার থানা থাকলেও জেলায় নেই। ফলে মুর্শিদাবাদের লোকজনকে এই সব অভিযোগ নিয়ে সাধারণ থানায় ছুটতে হচ্ছে। কিন্তু থানাগুলিতে সাইবার ক্রাইমের তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। মামলার তদন্তে দেরি হচ্ছে। কলকাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
সেই সমস্যা দূর করতে বহরমপুরে পুলিশ সুপারের অফিসে সাইবার থানা হচ্ছে। সেই থানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও এসে গিয়েছে। জেলার বেশ কিছু অফিসারকে সাইবার থানার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
ডোমকলের বাসিন্দা বাবর আলি বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যে অপরিচিত লোকজন ফোন করে জ্বালায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর কথাবার্তা বলতে দেখা যায়। এ বারে নিশ্চয় সাইবার জগতের অপরাধীরা ভয় পাবে। জেলার লোকজনও অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট জায়গা পাবেন।’’
বহরমপুরের সঙ্ঘমিত্রা বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় মহিলাদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়। কিন্তু অভিযোগ করেও অনেক সময় সুরাহা পেতে দেরি হয়ে যায়। জেলায় সাইবার থানা হলে নিশ্চয় দ্রুত ব্যবস্থা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy