Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রীরা জাতীয় স্তরে,  টোটো চালাচ্ছেন কোচ

তাঁর প্রশিক্ষণের জোরে প্রত্যন্ত প্রান্তের এক অখ্যাত মাদ্রাসার ছাত্রীরা পর-পর দু’বার সাইক্লিং-এ রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। গণ্ডীভাঙার সাহস দিয়েছিলেন তিনি-ই। বেলডাঙা দেবকুণ্ডু গালর্স হাই মাদ্রাসার কোচ মিলনতারা খাতুন এ বার সংসার চালানোর জন্য টোটোচালকের আসনে বসবেন।

চালকের আসনে সাইক্লিং কোচ মিলনতারা। নিজস্ব চিত্র

চালকের আসনে সাইক্লিং কোচ মিলনতারা। নিজস্ব চিত্র

অনল আবেদিন
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

তাঁর প্রশিক্ষণের জোরে প্রত্যন্ত প্রান্তের এক অখ্যাত মাদ্রাসার ছাত্রীরা পর-পর দু’বার সাইক্লিং-এ রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। গণ্ডীভাঙার সাহস দিয়েছিলেন তিনি-ই। বেলডাঙা দেবকুণ্ডু গালর্স হাই মাদ্রাসার কোচ মিলনতারা খাতুন এ বার সংসার চালানোর জন্য টোটোচালকের আসনে বসবেন।

পিছিয়ে পড়া মেয়েদের আলোর দিশা দেখানোর পরেও নিজের ঘরে আঁধার ঘোচেনি মিলনতারার। প্রশাসনিক স্তরে তাঁকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার কোনও তাগিদ দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত উদ্যোগী হন লালগোলা থানার ওসি বিপ্লব কর্মকার। তাঁর চেষ্টায় লালগোলার কয়েক জন শিক্ষক ও ব্যবসায়ী মিলে মিলনতারার জন্য একটি টোটো কিনে দিয়েছেন গত বুধবার সেই টোটোর চাবি হাতে নিয়ে মিলনতারা বলেন, ‘‘মাদ্রাসার ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর যে সময় বাঁচবে তখন আমি টোটো চালাব। অন্য সময় ভাড়ায় খাটাব। তাতে হয়তো অভাব কিছুটা মিটবে। পরের দিন কী খাব, কী করে বাজার করব, এই ভাবনাটা দিবারাত ধাক্কা দেবে না।’’ তাঁকে বেলডাঙায় একটি দোকান করে দেওয়ারও পরিকল্পনা চলছে।

লজঝড়ে সাইকেলে অনুশীলন করে জাতীয় স্তরের সাইক্লিং-এ ৫ বার এবং জাতীয় স্তরের কবাডি প্রতিযোগিতায় ৭ বার প্রতিনিধিত্ব করে ১২টি পদক জয় করেছেন তিনি। তার পরেও স্বীকৃতি দূরে থাক, সমস্যা গাঢ়তর হয়েছে। বাড়িতে চলাফেরায় অক্ষম বাবা-মা এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম একমাত্র ভাই। প্রতিদিন জীবনযুদ্ধে নাজেহাল হতে হয় বছর তেইশের লড়াকু কোচকে। পেটের জ্বালা মেটাতে হয় বেলডাঙা দেবকুণ্ডু গালর্স হাইমাদ্রাসার মিড-ডে মিল-এ।

বেলডাঙার মির্জাপুর গ্রামের মোয়ে মিলনতারা। এক সময় সেখানে গ্রামীণ সালিশি সভায় ‘অপরাধী’কে বাঁশের খাটো লাঠি দিয়ে পেটানোর রীতি ছিল। সেই থেকে ‘খুটবেড়ে গ্রাম’ নামে তার পরিচিতি। গ্রামের মানুষের অধিকাংশই ডুবে থাকতেন গভীর কুসংস্কারে। সেখানে নিয়ামত শেখ ও হাজেরা বিবির ৫ সন্তানের মধ্যে ৪ জনই মেয়ে। তিন মেয়ের বিয়ে এবং ছেলের চিকিৎসার পরে এখন হাতে রয়েছে মাত্র বাড়ির কাঠা দুয়েক ভিটেমাটি। মিলনতারা বলেন, ‘‘ভাই এখনও হাঁটতে পারে না। চাকরির জন্য বাড়ি বিক্রির কথা চলছে। রোগে বাবা মা-দু’জনেই প্রায় অচল। তাঁদেরও চিকিৎসা দরকার।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বিএসএফ ও পুলিশের চাকরির পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাইনি শারীরিক উচ্চতা কম বলে।’’ অনুচ্চ লড়াকু মেয়ে হাল না-ছেড়ে এ বার টোটোর হ্যান্ডেল ধরবেন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coach Cycling Poverty Passengers TOTO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE