দোকানে প্ল্যাকার্ড। নিজস্ব চিত্র।
পথচারীরা যতবার দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যান, ততবারই কানে আসে ওই হাঁকডাক। দোকানের এক খুদে কর্মচারী চিৎকার করে হাঁকছে— ‘‘সেল, সেল, সেল। ৬০ টাকায় বাড়ি নিয়ে যান এক কেজি দই।’’ জামাইষষ্ঠীর আগের দিন সকালে ব্যাগ হাতে শশব্যস্ত হয়ে বাজারে দৌড়নো কোনও শ্বশুর ওই হাঁক শুনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ান। তারপর মুখে হাসি এনে দোকানির উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘‘ওরে, ফেরার পথে কিনে নিয়ে যাব। তখন আবার স্টক ফুরিয়ে যাবে না তো!’’
গোটা চৈত্র মাস ধরে হওয়া সেলের সঙ্গে মধ্যবিত্ত বাঙালির পরিচয়, সখ্য, ভালবাসা অনেক দিনের। তা বলে দইয়ের সেল! ডোমকলের অনেক মিষ্টির দোকানেই প্রায় এক মাস ধরে চলছে ওই দইয়ের সেল। তাতে দেদার বিকোচ্ছে দই। গরমকালে সস্তার দই কিনতে দোকানে দোকানে উপচে পড়ছিল ভিড়। জামাইষষ্ঠীর আগের দিন সেই ভিড় আরও বেড়েছে। মিষ্টির দোকানিদের আশা, আজ, বুধবার ক্রেতার ভিড় আরও বাড়বে। কিন্তু হঠাৎ এমন সস্তা দামে দই বিক্রির ভাবনা কেন? খোলসা করলেন মিষ্টি দোকানের মালিকরাই। এক মিষ্টি বিক্রেতা জানালেন, করোনা আবহে গত এক মাস ধরে রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধ জারি। সারা দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা দোকান খোলার অনুমতি রয়েছে। এই অবস্থায় দুধ ব্যবসায়ীদের দুধের বিক্রি অনেক কমে গিয়েছে। ফলে তাঁরা অর্ধেকের কম দামে দুধ বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিন্তু মিষ্টি বিক্রেতারাও তো একই ফাঁপড়ে পড়েছেন। সারা দিনে তাঁদের মিষ্টির বিক্রি নেই। বাড়তি পড়ে থাকা দুধ যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, সেই জন্য তা দিয়ে তাঁরা দই তৈরি করছেন। এবং সেই দই বিক্রি করছেন জলের দরে। ডোমকলে অন্য সময় দইয়ের দাম ঘোরাফেরা করে ৯০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু চলতি পরিস্থিতিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় দই বিক্রি করে দিচ্ছেন মিষ্টির দোকানের মালিকরা। ডোমকলের হিতানপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিধিনিষেধ চলায় বিক্রি নেই দুধের। উদ্বৃত্ত দুধ থেকে তাই দই বানিয়ে সেলে বিক্রি করছি।’’ তবে এতে পোয়া বারো দইপ্রেমীদের। সকাল-বিকেল পুলিশের চোখ এড়িয়ে তাঁরা মিষ্টির দোকানে ভিড় করছেন দইয়ের টানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy