বেহাল রাস্তা। গয়েশপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ভোটের বাজারে তরজার বিষয়ের অভাব নেই। কখন কে কী নিয়ে যে কাকে আক্রমণ শানাবে, তা আঁচ করতে পারছে না কোনও পক্ষই। কল্যাণী বিধানসভার গয়েশপুরে এ বার খুঁড়ে রাখা রাস্তা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে সিপিএম-তৃণমূলে।
সিপিএম বলছে, খুঁড়ে রাখা রাস্তা ইচ্ছাকৃত ভাবে মেরামত করছে না তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। যাতে ভোটে গণ্ডগোলের সময় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পারে। আর তৃণমূল বলছে, রাস্তা খোঁড়ার এমন কাজ তো শুরু করেছিল বামেদের বোর্ড। তারা সময়ে শুরু করলে সময়ে শেষ হয়ে যেত।
তৃণমূলের কটাক্ষ, রাস্তা খোঁড়া থাকলে যদি তৃণমূল সুবিধা পায়, তাহলে সেই একই সুবিধা সিপিএমও তো নিতে পারে। পাল্টা সিপিএম জানাচ্ছে, তারা গণ্ডগোল পাকিয়ে ভোট করে না। এমন গুন্ডার কারবার তাদের নেই।
গয়েশপুর পুরসভায় কোনও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা ছিল না। বছর দুয়েক আগে সারা শহর জুরে পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থার জন্য ছাড়পত্র দেয় তৃণমূল সরকার। যদিও গয়েশপুর পুরসভায় তখনও সিপিএমের বোর্ড। এই প্রকল্পে মোট ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। তৃণমূলের অভিযোগ, সেই কাজ শুরু করতে বেশ দেরি করে বাম বোর্ড। ফলে কাজ শেষের সময়সীমাও পিছিয়ে যায়। এরই মধ্যে গত বার পুরভোট এসে পড়ে। ফলে কাজের গতি কমে।
সব মিলিয়ে বর্তমানে গয়েশপুর শহরের অধিকাংশ রাস্তাই এখন খোঁড়া। কোথাও রাস্তার মাঝ বরাবর খুঁড়ে, কোথাও বা পুরো রাস্তা খুঁড়ে চলছে নিকাশি পাইপ বসানোর কাজ। নিয়ম অনুযায়ী রাস্তায় পাইপ বসানোর কাজ হয়ে গেলে, সেই রাস্তা ফের নতুন করে তৈরি করে দিতে হবে।
রাস্তা খোঁড়া নিয়ে গয়েশপুরের বাসিন্দারা যারপরনাই বিরক্ত। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, কাজ শেষ হয়ে গেলে সেই রাস্তার হাল আর ফিরছে না। পিচ রাস্তা বেমালুম বদলে যাচ্ছে মাটির রাস্তায়। ফলে সে গাড়ি-ঘোড়া দূরের কথা, সে রাস্তা দিয়ে চলা ফেরা করাই দায়। তার উপরে রয়েছে ধুলোর মেঘ। এক একটা গাড়ি যাওয়া মানেই ধুলোয় চারদিক ছেয়ে ফেলা। পাইপ বসানোর পর কিছু কিছু রাস্তা নতুন করে তৈরি হয়েছে। বড় রাস্তাগুলি তৈরি হলেও, বড় রাস্তা থেকে বিভিন্ন এলাকায় ঢোকার ছোট ছোট রাস্তাগুলির বেশিরভাগই হয় নতুন করে তৈরি হয়নি, অথবা খোঁড়া রয়েছে। ফলে যাতায়াতে সমস্যা বাড়ছে।
যাতায়াতের এই সমস্যাকেই নিশানা করেছে সিপিএম। সিপিএমের প্রার্থী অলকেশ দাস বলেন, “গত বার পুরভোটের সময় আমাদের ওরা হুমকি দিয়ে প্রার্থী দিতে দেয়নি। ওদের হুমকির সামনে আমাদের লোকেরাও এ বার রুখে দাঁড়াচ্ছে। সেই জন্য আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি ছাড়া ওদের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই।”
সিপিএমের যুক্তি, সেই জন্য তৃণমূলের পুরসভা রাস্তা খুঁড়ে তা আর নতুন করে তৈরি করছে না। যাতে তারা বুথে গণ্ডগোল করলে দ্রুত পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পারে। কিন্তু সিপিএমের লোকেরা ফের তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার জন্য তৈরি সেখানে সমস্যা কোথায়? অলকেশবাবুর উত্তর, “আমরা গুন্ডা দিয়ে ভোট করছি না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ গুন্ডাদের ভয় পাবে।”
চেয়ারম্যান তথা গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি মরণ দে বলেন, “ওদের অভিযোগের ধারণা দেখে হাসি পাচ্ছে। যে সব এলাকায় কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই রাস্তা নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রাস্তাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। আর যদি এই কারণে সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সেই সুযোগ তো ওরাও পাবে। আসলে এ সব ওদের সম্ভাব্য পরাজয়ের অজুহাত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy