Advertisement
E-Paper

মায়ের মৃতদেহ রেখে মেয়ে বসল পরীক্ষায়

পরীক্ষা চলছে মেয়েটির। মাধ্যমিক। ভালয় ভালয় দু’টো বিষয় মিটে গিয়েছে। শনিবার ছিল ইতিহাস। সে তৈরিও ছিল। কিন্তু তার আগে এ কেমন পরীক্ষা?

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০২
বাবার সঙ্গে শামিমা। —নিজস্ব চিত্র

বাবার সঙ্গে শামিমা। —নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা চলছে মেয়েটির। মাধ্যমিক। ভালয় ভালয় দু’টো বিষয় মিটে গিয়েছে। শনিবার ছিল ইতিহাস। সে তৈরিও ছিল। কিন্তু তার আগে এ কেমন পরীক্ষা?

বাড়ির উঠোনে শুয়ে রয়েছে মায়ের নিথর দেহ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে আত্মীয়-পড়শিদের ভিড়। কান্নায় ভেঙে পড়েছে সবাই। কিন্তু মেয়েটিকে কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছে না। মাকে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না।
কিছুতেই যাবে না।কিন্তু তার যে মাধ্যমিক! আর একটু পরেই শুরু হবে ইতিহাস পরীক্ষা!

এ বার এগিয়ে এল মেয়েটির দাদা। বোনের মাথায় হাত রাখলেন তিনি। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘এ ভাবে ভেঙে পড়িস না রে। মা-ও চাইত, তুই লেখাপড়া করবি। বড় হয়ে স্কুলে পড়াবি। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবি না?’’

কামালপুরের একচিলতে উঠোনে ভিড় ঠেলে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল সামিমা খাতুন। তার পর চোখের জল মুছতে মুছতে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে মেয়ে চলল পরীক্ষা দিতে। কয়েক কিলোমিটার দূরে তার পরীক্ষাকেন্দ্র— চাচন্ড বি জে হাইস্কুল।

মেয়েটি বাড়ি ফিরছে বিষণ্ণ বিকেলে। অপেক্ষায় তার দাদা শাহবাজ খান ও পড়শিরা। জানাজার নমাজও শেষের দিকে। সামিমা আসার পরেই কবর দেওয়া হয় মোমেনা বিবিকে (৪২)। পড়শিরা বলছেন, ‘‘মোমেনার স্বপ্ন ছিল, মেয়েটা মানুষের মতো মানুষ হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এ মেয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে।’’

শুধু মেয়ে নয়, অভাবের সংসারে কষ্ট করে লেখাপড়া করছেন সামিমার দাদা শাহবাজ খানও। তিনি স্থানীয় কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। অথচ, মোমেনা লেখাপড়া তো দূরের কথা, নিজের নামটুকু পর্যন্ত লিখতে পারতেন না। সেই কারণেই কি লেখাপড়া না শেখার যন্ত্রণা টের পেয়েছিলেন বিড়ি শ্রমিক মোমেনা?

নিমতিতা হাইস্কুলের ছাত্রী সামিমা বুধবার মায়ের পাশে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মোমেনা মেয়ের জন্য রান্না করছিলেন। আচমকাই বুকে যন্ত্রণা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে।

সেই অবস্থাতেও পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সামিমা। তার কথায়, ‘‘আমি জানতাম, মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। সেই আশাতেই মনকে শক্ত করে পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু শনিবার সকালে খবর এল, মা আর নেই।’’

সামিমার বাবা দাউদ খান বলছেন, “এ সংসারে যা কিছু হয়েছে সবই মোমেনার জন্য। নিজে লেখাপড়া শিখতে পারেনি বলে খুব আফশোস করত। তাই হাজার কষ্ট হলেও ছেলেমেয়েদের কোনও দিন স্কুল কামাই করতে দেয়নি। আমিও চাই, ওরা মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করুক।’’ বাবাকে আঁকড়ে কান্নাভেজা গলায় দুই ভাইবোনও বলছে, ‘‘আমরা পারব। আমাদের পারতেই হবে।’’

Daughter Exam Mother Dead
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy