ধৃত অসীমা এবং বিশ্বজিৎ।
গ্রামবাসীরা অবরোধ করে বলেছিলেন, পুলিশ কুকুর আনলে হবে। বীণাপাণি বিশ্বাস খুনে কুকুর এসেও খুনির ধারকাছ মাড়ায়নি সে।
অথচ শেষ পর্যন্ত বগুলা কলেজ পাড়ার সেই বৃদ্ধা খুনে আততায়ী ধরা পড়ল বৃদ্ধার বাড়ি থেকেই। যাঁর ভরসায় বাড়িতে থাকতেন সত্তোরোর্ধ্ব বীণাপাণি, তাঁর সেই বৌমা অসীমা বিশ্বাসকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে বিশ্বজিৎ ওঁরাও নামে বহরমপুরের এক যুবককেও।
পুলিশের দাবি, বিশ্বজিতের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অসীমার। তার প্ররোচনাতেই সে শাশুড়িকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, অসীমার সঙ্গে বিশ্বজিতের মেলামেশার পথে প্রধান বাধা হয়ে উঠছিলেন বীণাপাণিদেবী। মঙ্গলবার দু’জনকে রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বুধবার রাতে নিজের ঘরে খুন হন বীণাপাণি। খুনের পরে বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল পুলিশের। কারণ ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তা হলে আততায়ী কোন পথে এসেছিল?
সোমবার রাতে পুলিশ বহরমপুর শহরে মাধবপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ওঁরাওকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে গ্রেফতার করা হয় অসীমাকে। পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “নানা কারণে ওই বৃদ্ধা দুজনের মধ্যে বাধা হয়ে উঠছিলেন। সেই কারণেই রাস্তা পরিষ্কার করতে তাকে খুন করা হয়।”
দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় হাঁসখালির অসীমার সঙ্গে বগুলা কলেজপাড়ার গোপাল বিশ্বাসের বিয়ে হয়। গোপাল দুবাইতে কাজ করতেন। বছরে মাস দু’মাস বাড়িতে থাকতেন। বিশ্বজিৎ হলেন অসীমার এক বান্ধবীর আত্মীয়। কলেজে পড়ার সময়েই তার সঙ্গে বিশ্বজিতের পরিচয়। বিয়ের পরে ফের নতুন করে দু’জনের যোগাযোগ শুরু হয়। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিল অসীমা। রাতে ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টার তাঁদের মধ্যে কথা হত বলেও জানিয়েছে পুলিশ। জানাজানি হওয়ার পরে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তিও হয়েছিল। মাস ছয়েক আগে দুবাইতে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গোপাল।
স্বামীর যে সংস্থায় কাজ করতেন, তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৬ লক্ষ টাকা দেয় অসীমাকে। সেই টাকার দাবি নিয়ে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়েছি। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় অসীমা দাবি করেছে, ঘটনার দিন পনেরো আগে পরিবারের সদস্যরা ঠিক করেন যে, দু’লক্ষ টাকা রাখা হবে বীণাপাণিদেবীর নামে। এক ননদও তার কাছ থেকে বাড়ি কেনার জন্য দু’লক্ষ টাকা দাবি করেন। পুলিশ মনে করছে, ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিশ্বজিৎকে বিয়ে করলে টাকা নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক চাপ তৈরি হবে বলে অসীমা আশঙ্কা করছিল। আর সে জন্য পথের কাঁটা বীণাপানিকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy