Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রী-পুত্রহন্তার ফাঁসির সাজা বহরমপুরে

পণ নিয়ে দর কষাকষি শেষে রফা হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। বিয়ের মাস আটেক পরেও সে টাকার সিংহভাগ না পাওয়ায় মারধর করে স্ত্রী-পুত্রকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সে। মেয়েকে নিয়ে পরের দিনই অবশ্য করজোড়ে জামাইয়ের কাছে হাজির হয়েছিলেন বীরেশ্বর মণ্ডল। আর্তি ছিল, কয়েকটা মাস সময় পেলেই বাকি টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেবেন তিনি।

সাজা ঘোষণার পরে পাঁচকুঠির বাড়িতে ভবানী মণ্ডলের বাবা-মা ও দিদা।— নিজস্ব চিত্র।

সাজা ঘোষণার পরে পাঁচকুঠির বাড়িতে ভবানী মণ্ডলের বাবা-মা ও দিদা।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪২
Share: Save:

পণ নিয়ে দর কষাকষি শেষে রফা হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। বিয়ের মাস আটেক পরেও সে টাকার সিংহভাগ না পাওয়ায় মারধর করে স্ত্রী-পুত্রকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সে।

মেয়েকে নিয়ে পরের দিনই অবশ্য করজোড়ে জামাইয়ের কাছে হাজির হয়েছিলেন বীরেশ্বর মণ্ডল। আর্তি ছিল, কয়েকটা মাস সময় পেলেই বাকি টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেবেন তিনি। সে আশ্বাসে অবশ্য মন ভেজেনি তাপস মণ্ডলের। সে রাতেই স্ত্রী ভবানী আর মাস আটেকের ছেলের মুণ্ডচ্ছেদ
করেছিল সে।

বুধবার, স্ত্রী-পুত্রহন্তা সেই তাপসের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করলেন মুর্শিদাবাদ জেলা জজ আদালতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক বিপ্লব রায়। তাপসের আইনজীবী বরেন রায় অবশ্য জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন তাঁরা।

নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজা ঘোষণা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে মা-দাদা-বৌদি এবং সাড়ে ৩ বছরের ভাইঝিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছিল কাঁথির দেবব্রত দাস। কাঁথি আদালত এ বছরের জুলাই মাসে দেবব্রতর ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির দুর্লভপাড়ায় বছর চারেকের এক শিশুকে অপহরণ করে খুন করার দায়ে বাবু মোল্লা এবং তার মা মঞ্জুমা বেওয়াকেও ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক।
সেই তালিকায় শেষ সংযোজন এ দিনের রায়।

মামলার সরকারি আইনজীবী শোভন রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘পণের দাবিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী-পুত্রকে গলা কেটে খুন করেছিল তাপস। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় তা স্পষ্টও হয়ে গিয়েছিল। সে জন্যই ফাঁসির সাজা ঘোষণায় দ্বিধা করেননি বিচারক।’’

তিনি জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় স্ত্রীকে নির্যাতনের জন্য দু’বছরের সাজা, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (বি) ধারায় পণের জন্য খুনের দায়ে যাবজ্জীবন এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেন। আর সেই সঙ্গে আট মাসের শিশুকে নৃশংস ভাবে গলা কেটে খুন করায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।

বিকেলে সাজার কথা জানতে পারেন বীরেশ্বরবাবু। বলছেন, ‘‘এ দিন সাজা ঘোষণা হবে শুনেছিলাম। তবে সাজা শুনে অস্থির মনটা শান্ত হল যেন।’’ আর, মা দুঃশলাদেবী বলছেন, ‘‘এখনও মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ে। কেন যে ওকে সে দিন জোর করে জামাইয়ের কাছে রেখে এলাম, আক্ষেপটা আজও যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE