Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের পরেও ক্লাস নেন স্যর

স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনির বিরোধিতা করে স্মারকলিপি জমা পড়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে। এরই মধ্যে উলটপুরাণের ছবি রানাঘাটের পায়রাডাঙা ভুদেব স্মৃতি বিদ্যাপীঠে।

স্কুলশিক্ষক রিপন পাল। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলশিক্ষক রিপন পাল। নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনির বিরোধিতা করে স্মারকলিপি জমা পড়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে। এরই মধ্যে উলটপুরাণের ছবি রানাঘাটের পায়রাডাঙা ভুদেব স্মৃতি বিদ্যাপীঠে।

স্কুল ছুটির পর সপ্তাহে দু’দিন বিনা পারিশ্রমিকে বিশেষ ক্লাস করাচ্ছেন ওই স্কুলের শিক্ষক রিপন পাল। পড়ুয়াদের জন্য এমন পদক্ষেপ হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাইভেট টিউশনের রমরমার মধ্যে রিপনের উদ্যোগকে দৃষ্টান্ত হিসাবেই দেখছেন অভিভাবকদের একাংশ।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি শনিবার দুপুর ১-৪০ মিনিটে স্কুল ছুটি হয়। ২০ মিনিটের টিফিনের পর দুপুর ২টো থেকে শুরু হয় ওই বিশেষ ক্লাস। মঙ্গলবার বিকেল ৪টে ৩৫ মিনিটে ছুটি হয়। মিনিট দশেক পরে ক্লাস শুরু হয়। চলে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা। এক পড়ুয়া বলে, “আমাদের কাছে ভাল সুযোগ এসেছে। স্যার খুব সুন্দর পড়ান। যে কারণে কেউ ক্লাস বাদ দিচ্ছেন না।”

ক্লাস শেষ হতে প্রায় ৪টে বেজে যায়। বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণীতে ৩৩ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের সকলেই উৎসাহ নিয়ে এই বিশেষ ক্লাস করার জন্য উপস্থিত থাকে। মঙ্গলবার বিকাল ৪-৩৫ মিনিটে ছুটি হয়। মিনিট দশেক পরে ক্লাস শুরু হয়। চলে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা। এখানে ২৫০ জন পড়ুয়া রয়েছে। একটা ভাল অংশের পড়ুয়ারা ক্লাস করছে। পড়ানোর পাশাপাশি গত দিনের খাতা দেখে দেন রিপনবাবু। পড়ুয়াদের স্মার্ট ক্লাসেও তাদের ক্লাস করাচ্ছেন।

রিপন প্রায় আড়াই বছর ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন। সেই সময়েও তিনি অনেক বেশি সংখ্যায় ক্লাস নিতেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। তাঁর পড়ানোর সুনাম শুনে অভিভাবকদের একাংশই রিপনকে বিশেষ ক্লাস নিতে অনুরোধ করেছিলেন। তাতে সম্মত হয়েই ওই ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি দীপক বসু বলেন, “রিপনবাবু খুব ভাল শিক্ষক। দীর্ঘ দিন ধরেই তাই তাঁকে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। তিনি আমার কথা রেখেছেন।” পাশাপাশি তিনি জানান, পড়ুয়াদের অনেকেই দুঃস্থ পরিবার থেকে আসে। তাদের পক্ষে আলাদা শিক্ষক রেখে পড়া সম্ভব নয়। বিশেষ ক্লাসে তারা উপকৃত হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক উৎপল বসুও এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটা খুব ভাল উদ্যোগ। আমরা ওই শিক্ষককে সাধুবাদ জানাচ্ছি।” যদিও রিপন নিজে এর জন্য আলাদা কোনও কৃতিত্ব দাবি করছেন না। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এক জন শিক্ষকের যা করা উচিত, আমি সেই দায়িত্বই পালন করছি।’’

অভিমন্যু পারেনি। তবে রিপনের মতো শিক্ষকদের পেলে ভবিষ্যতে প্রাইভেট টিউশনির চক্রব্যূহ ভেদ করে এগিয়ে যেতে পারবে পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Primary Education Ripan Pal Private Tuition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE