মেঘ-কুয়াশার জেটিঘাট। বুধবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
দিন কয়েক আগে, নবদ্বীপে পটুয়া মেলায় মেদিনীপুরের পটচিত্রীদের সেরা বাজি ছিল পটের ছবি রাঙানো ছাতা। চাহিদা দেখে শিশির ভেজা স্টলে বসে বিড় বিড় করছিলেন এক পটুয়া, ‘‘এমন জাইনল্যে আরও ক’টা ছাতাই না হয় আইনতাম গো!’’
শীতের জুবুথুবু মেলায় ছাতা বিকিকিনার এমন ধুম দেখেই কিনা কে জানে, মেলার শেষ দিকে আকাশের মুখ গিয়েছিল বার হয়ে! এল দুর্যোগ, পটের ছাতা মাথায় সান্ধ্য মেলার সে এক অন্য চেহারা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় শীতেও যেন ক্রমশ অনিবার্য হয়ে উঠছে ছাতা। ডিসেম্বরের গোড়ায় নিম্নচাপের দস্যিপনায় বৃষ্টি ভেজা মাটি শুকোনোর আগেই ফের ঘন মেঘে মুখ ডেকেছে আকাশের। মঙ্গলরে সকাল থেকে কুয়াশার চাদরে মোড়া পথঘাট দেখে সকাল না সন্ধ্যা বোঝা যাচ্ছিল না। তখনও বোঝাই যায়নি আকাশে সূর্য নেই। বেলা বাড়লে বোঝা গেল, হাওয়া দফতরের পূর্বাভাসই ঠিক, ফের নিম্নচাপ। সঙ্গে কনকনে হাওয়া ঝিরঝিরে বৃষ্টি, ছাতায় মাথা ঢেকে হোটেলে সেঁদিয়ে যাচ্ছেন পর্যটক। সব মিলিয়ে ভরা শীতেও ছাতা বিনে গীত নেই। সোয়েটার, টুপি, জ্যাকেট, মাফলারের সঙ্গে মাথায় একটি ছাতা যেন এবারের হবু শীতের ‘ম্যাসকট’ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়া বদলে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে জীবন বিপর্যস্ত। কুয়াশায় বাস ট্রেন দেরিতে চলছে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকছে বিভিন্ন ঘাটে খেয়া পারাপার। অফিস কাছারিতে পৌঁছতে নাজেহাল হতে হচ্ছে মানুষকে। ছাতা না নিয়ে ঘুরতে এসে আক্ষেপ করছেন নবদ্বীপ-মায়াপুরের পর্যটকেরা। ছবিটা একই রকম মুর্শিদাবাদেও। লালবাগে এসে হোটেল বন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন পর্যটকেরা। টাঙ্গা বন্ধ, হাজারদুয়ারির চত্বর যেন মনখারাপে ডুবে আছে।
খারাপ আবহাওয়ার জন্য নবদ্বীপ মায়াপুরের খেয়া চলাচল রবিবার থেকে থমকে গিয়েছে প্রায়। সকালের দিকে খানিক চললেও বুধবার সন্ধে থেকে তা ফের থমকে গিয়েছে। যার ফলে, বিপাকে নিত্যযাত্রী, পর্যটকের সঙ্গে ফেরি পারাপার করে দিন গুজরান করা মাঝি থেকে ও পারে নিত্য কাজের কোঁজে যাওয়া মিস্ত্রি-মজুর, থমকে গিয়েছে কাজ। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির তরফে অসীম দত্ত জানান, “আবহাওয়ার জন্য গত দু’দিনে যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে। বিভিন্ন রুটে বসেছে বাস।’’
মুর্শিদাবাদের অবস্থা আরও করুণ। বেড়াতে এসে কুয়াশায় হোটেলে বন্দি পর্যটকরা। গত কয়েক দিন ধরে বহরমপুর ও লালবাগের রাস্তায় ভিড় ছিল বহিরাগত পর্যটকদের। সোমবার সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা। মেঘ মাথায় করে কে আর বেরোবেন।
গুমসানো সেই আকাশের নীচে কাঁচুমাচু শীতের আনাজ। বেলডাঙার কপি সুবিদিত। কিন্তু মেঘের কোলে সে কপিতে ধসা রোগের ছায়া। মুর্শিদাবাদের বাঁধা এবং ফুলকপির দাম তাই হুহু করে পড়ছে। আকাশের দুর্যোগ বুঝি নেমে এল মাঠেও!
তথ্য সহায়তা: শুভাশিস সৈয়়দ
ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy