সুবিচার চাইতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা পেলেন না কৃষ্ণনগরে পুজোমণ্ডপের ভিতরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত কিশোরীর বাবা-মা।
আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরীর বাবা-মা মঙ্গলবার কলকাতার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক তাঁদের আবেদনপত্র জমা নেন। পরে কিশোরীর মা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দেখা হল না। তবে ওঁর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আমাদের ডাকা হবে।”
গত ১৬ অক্টোবর, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালে কৃষ্ণনগরের রামকৃষ্ণ আশ্রমপাড়া এলাকায় একটি ফাঁকা পুজোমণ্ডপের ভিতরে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর ‘প্রেমিক’ এক যুবককে গ্রেফতার করে।
পরিবারের অভিযোগ, কিশোরীকে ধর্ষণ করার পর গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এই ঘটনায় ধৃত যুবক ছাড়াও আরও লোকজন জড়িত ছিল বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু পুলিশের তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই খুনের বদলে বিষয়টি প্রেমিকের সঙ্গে অশান্তির জেরে আত্মহত্যার
ঝুঁকে পড়েছে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ময়নাতদন্তে জীবন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। তবে ধর্ষণের নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। যেখানে কিশোরীর দগ্ধ দেহ পড়ে ছিল, তার কাছেই একটি বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়, যার ভিতরে নীল কেরোসিনের তলানি পড়ে ছিল। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সেই বোতল থেকে আঙুলের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ময়নাতদন্তের সময়ে মৃতার হাতের দশ আঙুলের ছাপ এবং ধৃত যুবকের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছে। তবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্ট ও বিস্তারিত ফরেন্সিক রিপোর্ট না আসায় পুলিশ নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছে না।
তবে প্রথম থেকেই পুলিশের তদন্তে তাঁদের অনাস্থার কথা জানিয়ে এসেছেন মৃতার বাবা-মা। এ দিনও কিশোরীর মা বলেন, “এখনও পর্যন্ত মাত্র এক জন গ্রেফতার হয়েছে। এটা এক জনের কাজ নয়। তা হলে কেন আর কেউ গ্রেফতার হল না? আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ও কখনই আত্মহত্যা করতে পারে না।” যদিও সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে প্রথম থেকে তাঁরা জানিয়ে এলেও এখনও তেমন কোনও পদক্ষেপ করেননি।
মৃতার মা বলেন, “সুবিচারের দাবি নিয়ে আজ আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আশা কর্, উনি ডেকে পাঠিয়ে আমাদের কথা শুনবেন।” তাঁদের আইনজীবী শীর্ষেন্দু দাস বলেন, “আমরা তো আইনি লড়াই করবই। তবু, বিষয়টা মুখ্যমন্ত্রী নজরে আনা গেলে সেই লড়াইটা সহজ হবে। মেয়েটা সুবিচার পাবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)