E-Paper

আটক পরিযায়ীশ্রমিকেরা, তবুযাচ্ছেন আরও

মজুরি কম, একশো দিনের কাজ বন্ধ। কাজ করলেও ঠিক সময়ে মজুরি পাওয়া যায় না। পেট চালাতে হবে তো! বাধ্য হয়ে রাজ্য ছেড়ে যাচ্ছি।”

সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৯:১৭
কালীগঞ্জ

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাংলাদেশি সন্দেহে নথিপত্র যাচাইয়ের জন্য ফের অন্তত সাত জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করা হয়েছে হরিয়ানায়। তবু তারই মধ্য়ে ফের একটি পরিবার কাজের খোঁজে হরিয়ানায় যাওয়ার তোড়জোড় করছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পলাশির পাঁচখেলা এলাকার জাহিদ শেখের দুই ছেলে সাহিন শেখ ও করিম শেখ আট-দশ বছর ধরে গুরুগ্রামের নানুপুর সেক্টর ৩-এ এক আবাসনে সাফাইকর্মীর কাজ করছেন। বছর উনত্রিশের সাহিন শেখকে রবিবার দুপুরে স্থানীয় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে ছাড়া হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ।

জাহিদ বলেন, “আমি নিজেও বহু বছর ওই এলাকায় কাজ করেছি। কোনও দিন এমন কিছু দেখিনি। ছেলে ফোন করে কাগজপত্র পাঠাতে বলেছে। আমি থানায় সব কিছু জমা দিয়েছি। শুনছি, কাগজপত্র যাচাই হয়ে গেলে ছেড়ে দেবে। কিছু জন নাকি ছাড়া পেয়েছে।”

এই পরিস্থিতির মধ্যেই অবশ্য কাজের খোঁজে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে হরিয়ানায় যাওয়ার তোড়জোড় করছেন কালীগঞ্জের হাটগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের শেওড়াতলার খাসপাড়া গ্রামের হাসিবুল শেখ। তার জন্য মঙ্গলবার থানায় কাগজপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, “এই রাজ্যে উপার্জনের সুযোগ নেই। মজুরি কম, একশো দিনের কাজ বন্ধ। কাজ করলেও ঠিক সময়ে মজুরি পাওয়া যায় না। পেট চালাতে হবে তো! বাধ্য হয়ে রাজ্য ছেড়ে যাচ্ছি।”

হাসিবুল মূলত বিভিন্ন এলাকায় ঝাড়ু-জাতীয় জিনিসপত্র ফেরি করে বেড়াতেন। সারা দিন ঘুরে যে ক’টা টাকা আয় হত, তাতে তাঁর সংসার চলে না। হাসিবুরের স্ত্রী সাহানারা বিবি বলেন, “ছেলেমেয়েদের বইখাতার দাম, চাল-ডাল, টিউশন ফি, ওষুধের খরচ বাড়ছে। সামান্য রোজগারের টাকায় সংসার চলে না।” তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সবাই মিলে হরিয়ানায় গিয়ে কাজ করবেন। নিরাপত্তারক্ষী বা হোটেলের কাজ নেবেন।

ইতিমধ্যে স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিস ও থানায় ঘুরে কাগজপত্র জোগাড় করছেন হাসিবুলেরা। তাঁর ছেলে স্থানীয় দেবগ্রাম বিবেকানন্দ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র, মেয়ে কামারি হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তারাও বাবা-মায়ের হরিয়ানায় চলে যাচ্ছে। তাদের পড়াশোনা আপাতত বন্ধ হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে পুরো পরিবার থানায় হাজির ছিল প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে। তবে আতঙ্ক তাঁদের মনেও আছে। হাসিবুলদের হাটগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বসরখোলা গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক পিন্টু শেখ-সহ আরও কয়েক জন সম্প্রতি ওড়িশা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক পরে ছাড়া পেয়ে আবার কাজে ফিরেছেন।

হাসিবুল বলেন, “বাঙালি পরিচয়ে অনেককেই পুলিশ আটক করছে। তাই আমরা কাগজপত্র তৈরি করে নিচ্ছি, যাতে এমন কিছু না ঘটে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nadia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy