রাস্তার পাশে ডাঁই হয়ে থাকা নোংরার স্তূপটা ভোজবাজির মতো পলকে ভ্যানিশ!
ন্যাড়া বিদ্যুতের খুঁটিতে হঠাৎই ঝলমলে পথবাতি।
রাস্তার পাশে প্রায় মাটি ফুঁড়ে গজিয়ে ওঠা সিমেন্টের আস্তাকুঁড়।
মুখ্যমন্ত্রী আসছেন।
তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই যেন চেহারা বদলে গিয়েছে ডোমকলের। হাড় জিরজিরে নোংরা শরীর ঢেকে ফেলা হয়েছে মখমলের জোব্বায়।
সোমবারই ঢাউস ফড়িঙের মতো ডানা ফটফটিয়ে ডোমকলের আকাশে ঘুরে গিয়েছে হেলিকপ্টার। এক জোড়া হেলিপ্যাড, রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের ব্যস্ত আসা-যাওয়া, ঘন-ঘন হুটারের শব্দে সীমান্ত ঘেঁষা জনপদে যেন হঠাৎ হুল্লোড়। ভোট এগিয়ে এলে যেমন চিত্তিরবিচিত্তির পতাকা-ফেস্টুন দেখে আহ্লাদে আটখানা হয় কুচোকাচারা, এ-ও যেন তাই!
ভোটই তো আসছে ডোমকলে। বিরোধীরা বলছেন, ভোট আসছে বলেই নেত্রী আসছেন। তাই একটা খুশি-খুশি ভাব খুশবুর মতো আলতো ছড়াচ্ছে বাতাসে। আমজনতা অবশ্য বলছে, ক্ষতি কী! না হয় ভোটের কথা ভেবেই এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে যদি রাস্তা চকচকে হয়, আলো জ্বলে, ভালই তো!
গোড়ায় জেলাসদর বহরমপুরেই এই সভা হওয়ার কথা ছিল। রবিবার হঠাৎই সিদ্ধান্ত বদলে সভাস্থল চলে আসে ডোমকলে। প্রশাসনের কর্তারা রাতারাতি এসে হাজির। আর তাঁদের নির্দেশেই আলাদিনের চেরাগ থেকে দাসানুদাস জিন বেরিয়ে এসে বাতাসে ধুম্র আঙুল বুলিয়ে করে ফেলেছে সব। চোখের নিমেষে প্রাসাদ গড়ে দেয়নি। কিন্তু প্রাসাদের হুলিয়া বদলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন:গাফিলতি, ফের উঠল আঙুল
এই তো দেখ না, দু’দিন আগেও ম্যাড়ম্যাড়ে আকাশি ছিল প্রশাসনিক ভবন। আর এখন, এই দু’দিনের মধ্যে তা নীল-সাদা! ডোমকল শহরে এক মাত্র সরকারি অতিথিশালা ‘ভৈরব’ও জড়িয়ে নিয়েছে নীল সাদা ডুরে শাড়ি। প্রশাসনিক ভবনের সামনে আগাছায় ঢেকেছিল যে বাগিচা, তা হঠাৎ সেজে উঠেছে। অতিথিনিবাসের সামনে ছিল বিস্তর ঝোপঝাড়। সে সব নিড়িয়ে ফেলে পুঁতে দেওয়া হয়েছে হাসিখুশি ফুলে ঢাকা গোটা-গোটা গাছ। চৈতি হাওয়ায় খিলখিলিয়ে হাসছে একলা ফুল, জোড়া ফুল।
সাদা চোখে দেখলে জিনকে যদিও একেবারে ছাপোষা রকম দেখতে। ঝাড়ু হাতে রাস্তায় তাকে দেখায় হুবহু পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মীদের মতো। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝাঁটার গুঁতোয় সব সাফসুফ। যা কিছু ঝরা-মরা উড়ে গিয়ে পড়ছে রাস্তায়-রাস্তায় গজিয়ে ওঠা নতুন আস্তাকুঁড়ে, সবেরই গায়ে লেখা ‘ডোমকল পুরসভা’। ব্রিজ মোড় থেকে ওল্ড বিডিও মোড় পর্যন্ত যে পথ সন্ধে নামলেই অন্ধকারে ডুবে যেত, সেখানে এত আলো ঝলমল যে পা দিতেই গা ছমছম করছে রোমিও আর ছিঁচকে চোরদের।
বিরোধীরা বলছেন, ভোটের চমক!
লোকে বলছে, হোক না, ক্ষতি কী?
ডোমকলের মতিউর রহমান তো বলেই ফেলেন, “যে ভাবে রাতারাতি শহরটা বদলে গেল, মুখ্যমন্ত্রী বছরে দু’চার বার ঘুরে গেলেই হল। এই সব ভোজবাজি উবে যাওয়ার আগেই আবার আসতে হবে, এই আর কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy