বাস ধরার তাড়ায় সকালের জলখাবার পাতেই থেকে গিয়েছিল। হেঁশেল থেকে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এসেছিলেন সুনন্দাদেবী, ‘‘এই দ্যাখো ছেলের কাণ্ড! ওরে আর একটু খেয়ে নে। ফিরতে ফিরতে তো সেই বিকেল গড়িয়ে যাবে।’’
রবিবার সন্ধ্যায় স্বামী বাড়ি ফিরেছিলেন। ছেলে ফেরেনি। এ দিন দুপুরে বাড়ি ফেরার সময় কান্দিতে বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে বছর তেরোর শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়শিরা যাকে পাপু বলেই চেনেন। বড়ঞার কল্যাণপুরে তার মৃত্যুসংবাদ পৌঁছতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। সোমবার বিকেলে গ্রামে তার দেহ পৌঁছয়।
বড়ঞার একটি বেসরকারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র শুভঙ্করকে স্কুলের সকলেই পছন্দ করতেন। খেলাধুলো ও শরীরচর্চাতেও সে দড় ছিল। কয়েকদিন ধরে চোখে সমস্যা হওয়ায় রবিবার শুভঙ্করের বাবা সসীমবাবু ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বহরমপুরে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে।
কান্দি হয়ে বাসে বাড়ি ফিরছিলেন বাবা ও ছেলে। বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার ডান দিকে দাঁড়িয়েছিল পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক। সটান বাসটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে। তখন দু’একজন সামান্য চোট পেলেও বড় কিছু ঘটেনি। প্রথমে ঝাঁকুনি দিয়ে বাসটি কিছুটা পিছিয়ে যায়। তারপর প্রচণ্ড গতিতে ট্রাকটিকে পাশ কাটিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে যাওয়ার সময় টাল সামলাতে পারেননি বাসের অনেকেই। শুভঙ্কর ও বড়ঞার আন্দির বাসিন্দা মমতা রাজের (৪৩) ডান হাত জানলার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে আটকে যায় ট্রাকের সঙ্গে। ছিন্ন হাত ফেলে বাস ছুটতে থাকে। সেই সময় আজিমগঞ্জের ধোবাপুকুরের বাসিন্দা শ্রীদাম দাস (৩৩) নামে এক পথচারীকেও ধাক্কা দেয় বাসটি। মারা যান তিন জন।
সসীমবাবু পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক। তিনি ঘরের এক পাশে বসে রোগী দেখতেন। শুভঙ্কর আর এক পাশে বসে লেখাপড়া করত। সসীমবাবুই তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল। সুনন্দাদেবী বলেন, “জানেন, পাপু খেতে বড় ভালবাসত। তবে ওর বাবা ছাড়া কারও এঁটো খেত না। ছোট থেকেই ছেলেটা বড় বাপ ন্যাওটা। সকালে দু’জন একসঙ্গে বেরোল। ছেলেটা আর ফিরল না।’’
সসীমবাবু বলেন, “বাস চালকের ভুলের জন্যই সব শেষ হয়ে গেল। এ ভাবে বাস চালানো বন্ধ হোক। নাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমার মতো অনেক বাবা-মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে।”