আগুনে-জল: পুকুরে উল্টে পড়ার পর। বেতাইয়ে। নিজস্ব চিত্র
পাট বোঝাই একটি ট্রাক দ্রুত গতিতে ছুটছে। দাউদাউ করে জ্বলছে ট্রাকের সেই পাট। মঙ্গলবার সকালে এমন দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিল বেতাই বাজার। মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তার ভিড়। ট্রাকটিকে থামিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন স্থানীয় লোকজন। খবর যায় দমকলেও।
কিন্তু ট্রাকের চালক চন্দন সিংহ বুঝতে পারেন, এ ভাবে আগুন নিভবে না। তাছাড়া দমকল এসে পৌঁছনোর আগেই পাট তো বটেই, পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ট্রাকটিও। আশপাশে জনবসতি রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে আরও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।
আর কিছু না ভেবে তিনি সটান উঠে বসেন নিজের আসনে। হাটখোলাপাড়া থেকে ট্রাকের মুখ ঘুরে যায় বেতাইয়ের পলাশি মোড়ের দিকে। দ্রুত গতিতে ট্রাকটি এ বার পলাশি মোড় পেরিয়ে ছুটতে থাকে তেহট্টের দিকে।
করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কের দু’পাশে রয়েছে অজস্র পুকুর ও নয়ানজুলি। স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে কিছুটা দূরে রাস্তারপাশে একটি পুকুরে ট্রাকটিকে উল্টে দেন চন্দন। ট্রাকটির সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও আগুন নিভে যায়। তবে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামার সময় পা ভেঙে যায় চালকের।
স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার পরে চন্দন বলছেন, ‘‘এ ছাড়া আর অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। এই ঝুঁকিটা না নিলে আরও বড় বিপদ ঘটে যেত।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, চোখের সামনে বহু দু্র্ঘটনা তাঁরা দেখেছেন। তবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে পরিকল্পনা করে গাড়ি উল্টে দেওয়ার ঘটনা তাঁরা এই প্রথম বার দেখলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল দশটা নাগাদ পাটবোঝাই ট্রাকটি নাজিরপুর থেকে চিলাখালি যাচ্ছিল। পলাশি মোড় পেরোনের পরেই ঝুলে পড়া বিদ্যুতের তার ঠেকে যায় পাটে। তার পরেই এমন বিপত্তি। তবে এ দিন চালক নিজের জীবন বাজি রেখে যে তৎপরতায় গোটা ব্যাপারটা সামলেছেন তারও প্রশংসা করেছেন স্থানীয় লোকজন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই ঝুলে পড়ে রাস্তার উপরের বিদ্যুতের তার। সেখানে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। এ দিন যেমন সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। তাছাড়া বেশ কিছু ট্রাক আইন ভেঙে অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করে যাতায়াত করে। সেই কারণেও বিপত্তি ঘটে।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এ দিন ঠিক কী কারণে এমনটা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy