প্রতীকী ছবি।
নদিয়ার দক্ষিণে বিজেপির ঘরোয়া কোন্দল বহু দিন ধরেই ধোঁয়াচ্ছে। এ বার রানাঘাটে দলের দফতরের সামনেই নিগৃহীত হলেন দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায়। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
বিজেপি সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে দফতরের সামনে যখন এই হামলা হয়, রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার তখন দফতরে হাজির। এবং হামলায় যাদের নাম জড়িয়েছে, দলের অভ্যন্তরে তারা জগন্নাথের অনুগামী বলেই পরিচিত। তাদের এক জনের বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটের আগে এই দলীয় দফতরেই এক মহিলা কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। হামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর ছেলের নামেও। রাতে রানাঘাট থানায় গিয়ে কথা বললেও কারও নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি মানবেন্দ্র। তবে হামলার পান্ডা জনৈক ‘সাহা’ এবং তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর।
রাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘জগন্নাথ সরকারকে ডেকে ঘটনাটি জানতে চাওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড়া হবে না। দলীয় তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে।’’
বিজেপির অন্দরে মানবেন্দ্র রায় চিরকালই জগন্নাথের বিরোধী গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত। লোকসভা ভোটের আগে প্রার্থী নিয়ে ডামাডোলের সময়ে তিনি নিজেই মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন, কিন্তু দল শেষমেশ জগন্নাথকে দাঁড় করায়। তখন তিনিই ছিলেন দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, সাংসদ হওয়ার পরে তিনি সেই পদ ছাড়লে মানবেন্দ্রনাথ সভাপতি হন। কিন্তু ক্ষমতার বণ্টনেও গোষ্ঠী-কাজিয়া মেটেনি। বরং জেলা নতুন জেলা কমিটি গঠনে জগন্নাথ-ঘনিষ্ঠদের অনেকেরই ডানা ছাঁটা হয়, বাদ পড়েন অনেকে।
বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, রানাঘাটে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা দফতরে এ দিন সাংসদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা সভাপতি। বৈঠক চলার সময়েই বাইরে থেকে গালিগালাজ ভেসে আসছিল। বৈঠক সেরে বেরোনোর সময়ে কার্যালয়ের সামনেই মানবেন্দ্রনাথের উপরে চড়াও হন কয়েক জন। তাঁকে এলোপাথাড়ি ধাক্কা মারা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি। গোলমালের মধ্যে পড়ে মার খান মানবেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ এক যুবকও, তাঁর জামাকাপড়ও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণে অভিযুক্ত এক প্রাক্তন অফিস সম্পাদক এবং তাঁর ছেলেকে এই হামলায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে বলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি। ওই অফিস সম্পাদক কয়েক বছর আগে একটি বৈঠকে মানবেন্দ্রকে জুতো ছুড়ে মেরেছিলেন বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। এবং ঘটনাচক্রে, নতুন জেলা কমিটি থেকে তিনিও ছাঁটাই হয়েছেন।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দলে সাংগঠনিক নির্বাচন চলছে। বুথস্তরের নির্বাচন হওয়ার পরে এ বার মণ্ডল স্তরে নির্বাচনের পালা। তাতে দুই শিবিরই একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার জন্য ঘুঁটি সাজাচ্ছে। এর আগে বীরনগরে দলের এক মণ্ডল সভাপতি সম্পর্কে জেলা নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সব মিলিয়ে পারদ চড়ছিলই।
তবে জগন্নাথের দাবি, ‘‘এ রকম ঘটনার কথাই আমার জানা নেই। আমার সামনে অন্তত এ রকম কিছু হয়নি।’’ আর ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রাক্তন অফিস সম্পাদকের বক্তব্য, ‘‘মারধর করার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। জেলা সভাপতির সঙ্গে মণ্ডল সভাপতিদের বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। আমি এতে কোনও ভাবেই জড়িত নই।’’
মানবেন্দ্রনাথ সংবাদমাধ্যমের সামনে কারও নাম নিতে চাননি, ঘটনা নিয়ে কোনও কথাও বলতে চাননি। রাতে রানাঘাট থানা থেকে বেরিয়ে তিনি শুধু বলেন, ‘‘দলের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের নির্দেশ মতো পরে যা বলার বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy