Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Dhubulia

তন্ত্র মতে আরাধনা, নৌকা ছুঁয়ে বিসর্জন

ধুবুলিয়া থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে প্রাচীন জনপদ বেলপুকুর গ্রামে বাচস্পতি পাড়ার এই চার বাড়ির দুর্গা পুজোর বয়স আড়াইশো বছরেরও বেশি।

বড় বাড়ির দুর্গা। ধুবুলিয়ার বেলপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

বড় বাড়ির দুর্গা। ধুবুলিয়ার বেলপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য
ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২১
Share: Save:

পাশাপাশি চারটি বাড়ি। বড়, মেজ, ন আর ছোট। আগে চারটি বাড়িতেই দুর্গা পুজো হলেও এখন আর মেজ বাড়িতে দুর্গা পুজো হয় না। বড় বাড়ির দুর্গার দশটি হাতই সমান। কিন্তু ন বাড়ি আর ছোট বাড়ির দুর্গার দু’টি হাত বড়, বাকি আটটি হাত খুব ছোট। ছোট বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম অত্রি ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের বাড়ির দেবীকে গৃহিণী রূপেই দেখা হয় বলে আটটি হাত ছোট। আবার বড় বাড়ির প্রতিমা বড় এবং সবাইকে রক্ষা করছেন। তিনি যোদ্ধা। সে জন্য তাঁর সব কটি হাত সমান।

ধুবুলিয়া থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে প্রাচীন জনপদ বেলপুকুর গ্রামে বাচস্পতি পাড়ার এই চার বাড়ির দুর্গা পুজোর বয়স আড়াইশো বছরেরও বেশি। এমনটাই দাবি পরিবারের সদস্যদের। কথিত, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপিতামহ রুদ্রের সময় ঢাকা বিক্রমপুর থেকে এক তন্ত্রসাধক রামচন্দ্র ভট্টাচার্য বেলপুকুরে এসে বসবাস শুরু করেন ও কালীপুজোর প্রচলন করেন। রামচন্দ্রের প্রপৌত্র রঘুরাম বিদ্যা বাচস্পতি বেলপুকুর গ্রামে তাঁর বাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। পরবর্তী কালে রঘুরামের চার ছেলে আলাদা করে বড়, মেজ, ন ও ছোট বাড়ির দুর্গা পুজো শুরু করেন।

ছোট বাড়ির প্রবীণ সদস্য অজয় কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িগুলির দুর্গা পুজো হয় তন্ত্র মতে দেবী পুরাণোক্ত বিধি মেনে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে প্রতিটি বাড়িতে পুজোয় পশুবলির প্রচলন থাকলেও এখন ন বাড়িতেই শুধু পশুবলি হয়।’’

এই বাড়িগুলির আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল পাড়ায় যাঁদের বাড়ি পুজো হয় না, সেই সব বাড়িতে পুজোর প্রসাদ দিয়ে আসার রীতি চলে আসছে বহু বছর ধরে। বিসর্জনের সময় নিয়ম মেনে দেবীকে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গুড়গুড়ি খালে নৌকাবিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। খাল এক সময় গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও কয়েক বছর ধরে, খালে জল সে ভাবে না থাকায় ও নানা কারণে প্রতিমাকে নৌকাবিহার করে বিসর্জন দেওয়া হয় না বলে জানান অজয় ভট্টাচার্য। তবে প্রথা মেনে একটি নৌকায় দেবীকে ছুঁইয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়।

গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ দেশবিদেশে ছড়িয়ে থাকলেও দুর্গা পুজোয় যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গত দু’বছর অতিমারীর কারণে পুজো কোনও মতে সম্পন্ন হলেও এ বছর সবাই আশা করছেন আগের মতো ধুমধাম করে পুজো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhubulia durga puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE