Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙছে পাড়, ঘুম নেই কুলিদিয়ারের

ফরাক্কা ব্যারাজের সহকারী বাস্তুকার অসীম মণ্ডল জানান, ভরা গঙ্গা। তাই পাড়ের ধস রুখতে বাঁশ ঝাড়ের খাঁচা করে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। ভরা নদীতে এই মুহূর্তে পাথরের স্পার বাঁধানো সম্ভব নয়।

ফরাক্কার কুলিদিয়ারে। নিজস্ব চিত্র

ফরাক্কার কুলিদিয়ারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

ফের স্পার ধসল ফরাক্কার কুলিদিয়ারে। বছর পাঁচেক আগে এই স্পার বাঁধানো হয়েছিল। বর্তমানে ৪৯০০ মিটার থেকে ৬৭০০ মিটার পর্যন্ত স্পার বাঁধানোর কাজ করছে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। ভাঙন দেখা দিয়েছে ঠিক তার পাশেই। আগের বাঁধানো স্পার শনিবার ভোর থেকেই ধসতে শুরু করে।

ফরাক্কা ব্যারাজের সহকারী বাস্তুকার অসীম মণ্ডল জানান, ভরা গঙ্গা। তাই পাড়ের ধস রুখতে বাঁশ ঝাড়ের খাঁচা করে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। ভরা নদীতে এই মুহূর্তে পাথরের স্পার বাঁধানো সম্ভব নয়। তবে নদী থেকে জনবসতি অনেকটাই দূরে রয়েছে।

কিন্তু এই মুহূর্তে জলের যা তোড় তাতে ভাঙন ঠেকাতে পাড়ে বালি বোঝাই বস্তা ও বাঁশের ঝাড় ফেলা হলেও তাতে ঠিক কতটা ধস আটকানো যাবে তা নিয়ে নিশ্চিত নন ব্যারাজের কর্তারাও। ফরাক্কা ব্লকের ভাঙন কবলিত দু’টি গ্রামই রয়েছে গঙ্গার ওপারের চরে, ফরাক্কার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুর ও নয়নসুখ পঞ্চায়েতের কুলিদিয়ারের এ সমস্যা প্রতি বছরের।

২২ জুলাই বিকেল থেকে কুলিদিয়ারে পাথর বাঁধানো স্পারের ৫০ মিটার অংশ ধসে পড়ে নদীতে। তার পরে ধসে পড়ে হোসেনপুরে নির্মীয়মাণ পাথর বাঁধানো ৮ ও ৯ নম্বর স্পারের ১০০ মিটার অংশ। বাঁশের ঝাড় ও বালি বোঝাই বস্তা ফেলে নদীর স্রোতের ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা হয়। দু’দিন পরেই ধসে পড়ে ৫ নম্বর স্পারের ৮০ মিটার অংশ।

শনিবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে কুলিদিয়ারের ভাঙন। বিকেল পর্যন্ত ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন চলছে। চরের ঘন বসতির গ্রামে বালি মাটি বলে ভাঙন এক বার শুরু হলে তা ঠেকানো কঠিন। এই অবস্থায় রাতারাতি নদী ভাঙন ঠেকানো প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন রাজ্য সেচ ও ফরাক্কা ব্যারাজ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে এই দুই গ্রামে বহু বাড়ি নদী গর্ভে চলে যায়। গত এপ্রিল মাস থেকেই হোসেনপুরের ওই এলাকায় ১৮০০ মিটার দীর্ঘ স্পার বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছিল ১৬.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। সে কাজ প্রায় শেষের মুখে। এই এলাকায় ডাউন স্ট্রিমে ৬.৯ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত গঙ্গা ভাঙন ঠেকাবার দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের। তারপরের অংশ পড়ে রাজ্য সেচ দফতরের অধীনে।

নয়নসুখের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুলেখা মণ্ডল জানান, শনিবার ভোর থেকেই ভাঙন শুরু হয় হোসেনপুর লাগোয়া কুলিদিয়ারের কান্তু সরকার পাড়ায়। প্রায় ২০০ মিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে নদী। এই এলাকায় ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের। তাঁরা এসে অস্থায়ী কাজ শুরুও করেছেন।

গত বছর ৭১টি এবং এ বছর ২০টি বাড়ি ভাঙনে নদীতে ধসে গিয়েছে এই দুই গ্রামে। তাঁরা অন্যের জমিতে কেউ চালা করে আছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন চাটাইয়ের ঘরে। সরকারি সাহায্য একটি করে ত্রিপল ও কয়েক কিলো চাল পেয়েছেন তারা। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে ফের ভাঙন-ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farakka River Ganges Erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE