Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়তি টাকা ফেরালেন ব্যাঙ্ককর্মী

ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে আসার পরদিন ফের ব্যাঙ্ক থেকে ডাক পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন বহরমপুরের মধুপুরের প্রৌঢ়া পদ্মাবতী ঘাটা। শুক্রবার দুপুরে কিছুটা ভয়ে ভয়েই গুটি গুটি পায়ে হাজির হন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের কাশিমবাজার শাখায়।

ব্যাঙ্ককর্মী বীরেন ব্রহ্ম। নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্ককর্মী বীরেন ব্রহ্ম। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২২
Share: Save:

ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে আসার পরদিন ফের ব্যাঙ্ক থেকে ডাক পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন বহরমপুরের মধুপুরের প্রৌঢ়া পদ্মাবতী ঘাটা। শুক্রবার দুপুরে কিছুটা ভয়ে ভয়েই গুটি গুটি পায়ে হাজির হন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের কাশিমবাজার শাখায়।

সেখানে যে তাঁর জন্য এমন চমক অপেক্ষা করে রয়েছে তা কল্পনাতেও ছিল না পদ্মাবতীদেবীর। ব্যাঙ্কের কর্মী বীরেন ব্রহ্ম তাঁর হাতে ১৪ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘কাল আপনি এই টাকাটা বাড়তি জমা দিয়েছিলেন। এটা আপনারই।’’ আবেগে আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি প্রৌঢ়া।

বৃহস্পতিবার পদ্মাবতীদেবী এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের কাশিমবাজার শাখায় ৩৯ হাজার টাকা জমা দেন। সবই ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। বীরেনবাবু জানান, ব্যাঙ্কে নোট গোণার ছ’টি যন্ত্র রয়েছে। পদ্মাবতীদেবী যখন টাকা জমা দেন, তখন যন্ত্রের চারপাশে বেশ কিছু নোট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। নোট গুণতে গিয়ে তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন থাকায় তখনই ওই মহিলাকে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

দিনের শেষে হিসেব মেলানোর সময়ে ধরা পড়ে যে, ওই মহিলা ১৪ হাজার টাকা বেশি জমা দিয়েছেন। কাউন্টারে নোট জমা দেওয়ার সময়ে ওই মহিলার পিছনেই ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মধুপুরেরই বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী নীলিমেশ বিশ্বাস।

নীলিমেশবাবু জানান, টাকা জমা দেওয়ার সময় বীরেনবাবু পদ্মাবতীদেবীর মোবাইল নম্বর চেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি নম্বর দিতে পারেননি। পরিচিত বলে তাঁর মোবাইল নম্বর বীরেনবাবু লিখে রাখেন। শুক্রবার সকালে বীরেনবাবু ব্যাঙ্ক থেকে ওই ব্যবসায়ীকে ফোন করেন। তিনি পদ্মাবতীদেবীকে এক বার ব্যাঙ্কে পাঠাতে বলেন। খবর পেয়ে পদ্মাবতীদেবী ব্যাঙ্কে এসে পৌঁছন। কিন্তু তাঁর জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে, তখনও পর্যন্ত তিনি জানতে পারেননি। পরে ওই ব্যাঙ্ক কর্মী তাঁর হাতে ২৭টি ৫০০ টাকার নোট এবং ৫টি ১০০ টাকার নোট দিয়ে গোটা বিষয়টি খুলে বলেন। কেঁদে ফেলেন প্রৌঢ়া।

পদ্মাবতীদেবী জানান, বছর দেড়েক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। ছেলেকে মোটারবাইক কিনে দেওয়ার জন্য তিনি যে ঘরে ওই নগদ টাকা রেখেছেন, তিনি জানতেন না। নোট নিয়ে শোরগেল শুরু হওয়ায় আলমারি হাতড়ে ওই নগদ টাকা বের হয়। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পরে মানসিক অবসাদে ভুগছি। ব্যাঙ্কের স্লিপে কত টাকা লিখেছি এবং কত টাকা জমা দিয়েছি আমার কিছুই খেয়াল নেই।’’

পদ্মাবতীদেবী বলেন, ‘‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে গেল।’’ আর বীরেনবাবু বলছেন, ‘‘ এ আর এমনন কী! এটুকু মানবিকতা না থাকলে এই কাজ করব কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bank employee Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE